প্রথম কাতারে নামায আদায়ের ফযিলত।

জামাতের নামাযে প্রথম কাতারের ফযীলত কী?
এ প্রশ্নের উত্তর হাদীস শরীফে একটু ভিন্নভাবে দেওয়া হয়েছে। এর ফযীলত এত এত- এভাবে না বলে বলা হয়েছে- এর ফযীলত যদি তোমরা জানতে তাহলে লটারী করে হলেও প্রথম কাতারে স্থান করে নিতে, প্রথম কাতারে দাঁড়াতে!
এর দ্বারা এ আমলের প্রতি আমাদের তীব্র আগ্রহ সৃষ্টি করা হয়েছে; যাতে আমরা এ আমলের ফযীলত লাভ করতে পারি। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَوْ يَعْلَمُ النّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصّفِّ الأَوّلِ، ثُمّ لَمْ يَجِدُوا إِلّا أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوا…
আযান এবং প্রথম কাতারের ফযীলত যদি মানুষ জানত; আর লটারী করা ছাড়া এ আমলের সুযোগ পাওয়া না যেত, তাহলে লটারী করে হলেও মানুষ এ আমলে অংশ নিত। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৫
এ হাদীসে যদিও অভিনব উপস্থাপনের মাধ্যমে আমলের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে, নির্দিষ্ট কোনো ফযীলতের উল্লেখ আসেনি, কিন্তু আরেক হাদীসে এ আমলের এমন এক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, যা লাভ করার জন্য আসলেও লটারী করে প্রথম কাতারে দাঁড়ানো উচিত। বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
إِنّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلّونَ عَلَى الصّفِّ الْأَوّلِ.
যারা প্রথম কাতারে দাঁড়ায় আল্লাহ তাআলা তাদের উপর রহমত নাযিল করেন এবং তাঁর ফিরিশতারা তাদের জন্য দুআ-ইসতিগফার করে। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৯৯৭
একটু চিন্তা করে দেখি, এ আমলের দ্বারা আমরা শুধু ফিরিশতাদের দুআ-ইসতিগফারই নয়; বরং বান্দার প্রতি আল্লাহর ‘সালাত’ তথা রহমতও লাভ করতে পারি।
উপরোল্লিখিত বর্ণনায় الصف الأَوّل (প্রথম কাতার) শব্দে বর্ণিত হয়েছে; তবে কিছু বর্ণনায় الصفوف الأُوَل (সামনের দিকের কাতারসমূহ)-এই শব্দে বর্ণিত হয়েছে। (দ্র. সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৬৪) সে হিসাবে সামনের দিকের কাতারে দাঁড়ানোর মাধ্যমেও এ ফযীলত লাভের আশা করা যায়। সুতরাং সামনের কাতারগুলো পূরণ করার ব্যাপারে যতœবান হওয়া উচিত।
আর সামনের কাতার পুরা করা ফিরিশতাদের ছিফাত। জাবের ইবনে সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
أَلَا تَصُفّونَ كَمَا تَصُفّ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا؟ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ، وَكَيْفَ تَصُفّ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا؟ قَالَ: يُتِمّونَ الصّفُوفَ الْأُوَلَ وَيَتَرَاصّونَ فِي الصّفِّ.
তোমরা কি সেভাবে কাতারে দাঁড়াবে না, যেভাবে ফিরিশতারা তাদের রবের সামনে দাঁড়ায়! তখন আমরা বললাম, ফিরিশতারা তাদের রবের সামনে কীভাবে কাতারে দাঁড়ায়? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা সামনের কাতারগুলো আগে পূরণ করে এবং মিলে মিলে দাঁড়ায়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩০
আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أَتِمّوا الصّفّ الْمُقَدّمَ، ثُمّ الّذِي يَلِيهِ، فَمَا كَانَ مِنْ نَقْصٍ فَلْيَكُنْ فِي الصّفِّ الْمُؤَخّرِ.
তোমরা প্রথম কাতার আগে পুরা কর। এরপর এর পরের কাতার। যদি কোনো কাতার অপূর্ণ থাকতে হয় সেটা সবচেয়ে পেছনের কাতার থাক (অর্থাৎ, সামনের কোনো কাতার যেন অপূর্ণ না থাকে।) -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৭১
তবে একেবারে সামনের কাতারে দাঁড়ানোর ফযীলত যে সবচেয়ে বেশি এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করা- একেবারে সামনের কাতারে দাঁড়াতে। আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, একবার একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন-
إِنّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلّونَ عَلَى الصّفِّ الْأَوّلِ.
যারা প্রথম কাতারে দাঁড়ায় আল্লাহ তাআলা তাদের উপর রহমত নাযিল করেন এবং তাঁর ফিরিশতারা তাদের জন্য দুআ-ইসতিগফার করে।
একথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহর রাসূল! দ্বিতীয় কাতারের উপরও? তাদের এ প্রশ্ন শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন-
إِنّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلّونَ عَلَى الصّفِّ الْأَوّلِ.
এভাবে তিনবার ঘটার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন-
وَعَلَى الثّانِي.
হাঁ, দ্বিতীয় কাতারের উপরও! -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২২৬৩
Leave a Reply