উল্টা বুঝলি রে রাম!

এক দেশে গাপাল নামে এক মুচি ছিল। বেজায় অভাবী। নুন আনতে পান্তা ফুরায় দশা। একদিন নগরীর ব্যস্ত রাস্তার এক কোণে আনমনে জুতো সেলাই করছিল আর ভাবছিল, অভাবের সংসারের কথা। রাস্তার বেশ খানিক দূরে নগরীর প্রধান কাজী গাধার পিঠে নগর প্রদক্ষিণে বের হয়েছেন। এ দেখে মুচির দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এল। উপরের দিকে তাকিয়ে অভিযোগের ভঙ্গিতে বলল, ‘হে রাম, আমার যদি কাজী সাহেবের মতো একটা গাধা থাকতো! গাধার পিঠে সওয়ার হয়ে আরামে ঘুরে ঘুরে ছেঁড়া জুতো সংগ্রহ করে সেলাই করতাম। আয় রোজগার ভালোই হত। এ জীবন আর কতদিন!’
যেই না বলা শেষ অমনি সামনে দেখল প্রথমে কাজী সাহেবের জুতো, পা, এরপর পুরা অবয়ব। প্রণাম হই বলে সন্ত্রস্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়াল। কাজীর মুখে রাজ্যের বিরক্তি। বলল, এই বেটা মুচি, কাজ ফেলে অন্যদিকে তাকিয়ে সময় নষ্ট করছিস, হাতে তোর তো কাজ নেই। গাধার পিঠে শহর ঘুরতে বেরিয়েছি। গাধার বাচ্চাটার কারণে গাধাটা এগুতেই চায় না! কাজ তো করছিস না! তুই এক কাজ কর। গাধার বাচ্চাটাকে ঘাড়ে নে আর আমার সঙ্গে ঘোর।
মুচি ভাবছিল গাধার পিঠে ঘুরবে, তা না এখন নিজেরই কাঁধে গাধা নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে। মুচি কোনো প্রতিবাদ না করে গাধার বাচ্চা কাঁধে নিয়ে বিড়বিড় করে বলল, ‘উল্টা বুঝলি রে রাম!’
রাব্বুল আলামীন সত্য বলেছেন-
لَهٗ دَعْوَةُ الْحَقِّ وَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ لَا یَسْتَجِیْبُوْنَ لَهُمْ بِشَیْءٍ اِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّیْهِ اِلَی الْمَآءِ لِیَبْلُغَ فَاهُ وَ مَا هُوَ بِبَالِغِهٖ وَ مَا دُعَآءُ الْكٰفِرِیْنَ اِلَّا فِیْ ضَلٰلٍ.
আল্লাহরই কাছে দুআ করা যথার্থ। তারা তাঁকে ছেড়ে যেই দেব-দেবীদের ডাকে, তারা তাদের দুআর কোনো জবাব দেয় না। তাদের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির মত, যে পানির দিকে দুই হাত বাড়িয়ে আশা করে পানি আপনা-আপনিই তার মুখে পৌঁছে যাবে, অথচ তা কখনো নিজে-নিজে তার মুখে পৌঁছার নয়। আর (দেব-দেবীদের কাছে) কাফেরদের দুআ শুধুই বৃথা। -সূরা রাদ (১৩) : ১৪
ইউসুফ আ. জেলখানার সঙ্গীদেরকে দাওয়াতের শেষ পর্যায়ে বলেন-
اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلهِ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ ذٰلِكَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ وَ لٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَعْلَمُوْنَ .
হুকুম দানের ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নেই। তিনিই এ হুকুম দিয়েছেন যে, তোমরা তার ভিন্ন অন্য কারও ইবাদত করো না। এটাই সরল-সোজা পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। -সূরা ইউসুফ (১২) : ৪০
Leave a Reply