আলকুরআনে মানবহত্যার শাস্তি ন্যায়বিচার ও কিসাসের বিধান

ইসলামে মানবহত্যাকে সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধ ও মহাপাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কুরআনে কারীমে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা গোটা মানবজাতিকে হত্যা করার মতো। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন:
“কেউ যদি হত্যা অথবা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টির অপরাধ ছাড়া কাউকে হত্যা করে, তবে সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করল।” (সূরা মায়েদা ৫:৩২)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা কত বড় গুনাহ এবং এর শাস্তি কতটা কঠিন হতে পারে। কুরআনে কারীমে হত্যার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। দুনিয়াতে হত্যাকারীর জন্য কিসাসের বিধান রয়েছে, যা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
“হে মুমিনগণ! যাদেরকে (ইচ্ছাকৃত অন্যায়ভাবে) হত্যা করা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কিসাস (-এর বিধান) ফরয করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, গোলামের বদলে গোলাম, নারীর বদলে নারী (-কেই হত্যা করা হবে)।” (সূরা বাকারা ২:১৭৮)
কিসাসের বিধান অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করলে শরয়ী সাক্ষ্য-প্রমাণ বা খুনির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তাকে হত্যার শাস্তি দেওয়া হবে। নিহতের পরিবার চাইলে হত্যাকারীকে ক্ষমা করতেও পারে বা অর্থদণ্ড (দিয়ত) নিতে পারে। কুরআনে বলা হয়েছে:
“অতঃপর হত্যাকারীকে যদি তার ভাই (নিহতের ওলি)-এর পক্ষ থেকে কিছুটা ক্ষমা করা হয়, তবে ন্যায়ানুগভাবে (রক্তপণ) দাবি করার অধিকার (ওলির) আছে। আর উত্তমরূপে তা আদায় করা (হত্যাকারীর) কর্তব্য।” (সূরা বাকারা ২:১৭৮)
ইসলাম ন্যায়বিচার ও ইনসাফের ধর্ম। ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা সবাই ইসলামের চোখে সমান। অপরাধী যতই প্রভাবশালী হোক, অপরাধ প্রমাণিত হলে কিসাস কার্যকর করা হবে। কুরআনে আরো বলা হয়েছে:
“আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুসারে বিচার করে না, তারা জালেম।” (সূরা মায়েদা ৫:৪৫)
পরকালে হত্যাকারীর জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন:
“আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত কোনো মুমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হবে জাহান্নাম। তার মধ্যে সে সর্বদা থাকবে এবং আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন ও তাকে অভিশাপ দেবেন।” (সূরা নিসা ৪:৯৩)
ইসলামে কিসাসের বিধান সমাজে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুরআনে বলা হয়েছে:
“হে বুদ্ধিমানরা! তোমাদের জন্য কিসাসের মধ্যে রয়েছে জীবন (রক্ষার ব্যবস্থা)। আশা করা যায় তোমরা (এর বিরুদ্ধাচরণ) পরিহার করবে।” (সূরা বাকারা ২:১৭৯)
ইসলামের এই ন্যায়বিচারমূলক বিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজ থেকে হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধ দূর করা সম্ভব।
তথ্যসুত্র- মাসিক আল কাউসার।
Leave a Reply