মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের উৎস

ইসলাম গোটা মুসলিম জাতির মধ্যে ভাষা, বর্ণ আর রাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে ধর্মীয় ঐক্যের বীজ বপন করেছে। মুসলিম উম্মাহ ধর্মীয় চেতনায় সবাই এক ও অভিন্ন। হোক সে নারী-পুরুষ, পীর-মুরিদ, আলেম-মূর্খ, শাসক-শাসিত, ধনী-গরিব, কর্মকর্তা-কর্মচারী, যুবক-বৃদ্ধ।

ইমাম রাগিব ইস্পাহানি (রহ.) তাঁর ‘মুফরদাতুল কুরআন’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘উম্মাহ বলা হয় এমন মানবগোষ্ঠীকে, যাদের মধ্যে কোনো বিশেষ কারণে সংযোগ ও ঐক্য বিদ্যমান।

আর বেশির ভাগ তাফসিরবিদ একমত যে বিশেষ ঐক্য হলো ধর্মীয় ও জাতীয় স্বার্থে ঐক্য। 

মহানবী (সা.) মদিনায় তার প্রতিফলন ঘটান। যেখানে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভালোসায় পরিপূর্ণ ছিল। প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা আর কাজকর্মে একতার ফলে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে রুহানি পরিবেশ বিরাজ করত।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর মুহাজিরদের আগমনের আগে যারা মদিনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদেরকে ভালোবাসে। আর মুহাজরিদের যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না। এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদের অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম।

’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ৯) 

এ ছাড়া মুসলিম-অমুসলিম সব মানুষ আদম সন্তান। তাই ইসলাম ধর্ম মানুষের অধিকার নিশ্চিতে গুরুত্ব প্রদান করেছে। মহানবী (সা.) মদিনা সনদে স্পষ্ট ঘোষণা করেন, ধর্মীয় পার্থক্যের কারণে জাতীয় স্বার্থের ব্যত্যয় ঘটতে পারে না। জনসাধারণের ঐক্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় জাতীয় স্বার্থ। যেখানে মানুষের জান-মাল নিরাপদ এবং অপরাধ নিষিদ্ধ।

একতা ও ভালোবাসার মাধ্যমে সাহাবিদের ভ্রাতৃত্ববোধ এত প্রগাঢ় হয়ে ওঠে যে একজন অন্য ভাইয়ের জন্য ধন-সম্পদ এবং প্রিয়জন ছেড়ে দিতেও দ্বিধা করত না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালোবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেল।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)

মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের উৎস একত্ববাদের বিশ্বাস। ইবাদতের ঐক্যস্বরূপ সমগ্র দুনিয়ার মুসলমান আল্লাহর ঘর কাবা শরিফের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করে। পবিত্র হজের মৌসুমে মক্কায় হজ পালন করে। সব মুসলমান একই কোরআন ও হাদিস পাঠ করে। মহানবী (সা.)-এর রেখে যাওয়া আদর্শের অনুসারী সবাই, তবে আজকে মুসলমানদের ভ্রাতৃত্ববন্ধনে ফাটল কেন? আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শন আসার পর। আর তাদের জন্যই আছে কঠোর আজাব।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৫)

মুসলিম উম্মাহর ধর্ম পালন পদ্ধতি আহলে হাদিস, কেয়ামি, মাজহাবপন্থী, তাবলিগি, পীরবাদী, সুফিবাদী, জামাতপন্থী, কট্টর শরিয়তপন্থী, কট্টর মারেফতপন্থী, মৌলবাদী, সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে মতভেদ হলেও একত্ববাদ, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, জান্নাত, জাহান্নামসহ মৌলিক বিষয়ে সবাই একমত। শাখাগত এসব বিষয়ে বৃহত্তর ঐক্য গঠনে অন্তরায় নয়।

আর ভুলে গেলে চলবে না যে অনৈক্য মুসলমানদের শক্তি নিঃশেষ করে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো এবং পরস্পর ঝগড়া কোরো না, তাহলে তোমরা সাহস হারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধরো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৪৬)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *