ইসলাম কি আমাদের ক্ষুধামুক্ত সমাজ উপহার দিবে?

লক্ষ্য করুন, পবিত্র কুরআনের  পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে মিসকিনদের খাওয়ানোর কথা। এমনকি কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করে, তার প্রায়শ্চিত্ত হচ্ছে ৬০ জন মিসকিনকে পেট ভরে এক বেলা খাওয়ানো। আবার কেউ যদি কসম ভঙ্গ করে তার শাস্তি হচ্ছে,  ১০ জন মিসকিনকে পেট ভরে খাওয়ানো।

মজার ব্যাপার কি জানেন? আল্লাহ বলেন নাই যে রোজা বা  কসম ভাঙলে মসজিদে কিছু টাকা দান করো কিংবা হুজুর ডেকে খাওয়াও অথবা আল্লাহর নামে ওমক স্থানে কিছু খাবার রেখে আসো। বরং আল্লাহ বলেছেন আমি তোমাদের থেকে রিজিক চাই না। আমার দেওয়া রিজিক মানুষের কল্যাণে ব্যয় কর। সেই তুলনায় অন্যান্য অনেক ধর্মের ক্ষেত্রে আমরা বরং দেখি যে পাপের প্রায়শ্চিত্তের ব্যয় যায় মন্দিরে, গির্জায় অথবা পুরোহিতদের কাছে। অথচ ইসলাম ধর্মে আল্লাহর সাথে হক ভঙ্গের ব্যয়টা গিয়েছে অভাবীদের ক্ষুধা মুক্তির লক্ষ্যে। কেবল তাই না। সূরা ইয়াসিনে বলা হয়েছে, ” যারা কাফের তারা বলে,  আমরা কি তাদেরকে খাওয়াবো যাদেরকে আল্লাহ চাইলে নিজেই খাওয়াতে পারতেন?

একই ধরণের বর্ণনা আমরা পাই সুরা মাউনে। বিচার দিবস অস্বীকারকারীর পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে এমন ব্যক্তি মিসকিনদেরকে খাওয়ানোর ব্যাপারে উৎসাহিত করে না।

এই সব তো গেল ঐচ্ছিক। এখানেই আল্লাহ থেমে যান নাই বরং জাকাত দেওয়া বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। কেবল বাধ্যতামূলকই করেন নাই। একেবারে পাঁচ স্তম্ভের একটি করে দিয়েছেন। অথচ জাকাতের টাকায় মসজিদ নির্মাণ করা নিষিদ্ধ। কারো বেতন দেওয়া নিষিদ্ধ। এটা সরাসরি ধনীদের টাকা গরিবদেরকে দেওয়ার বিধান। শুধু কি তাই? এটাকে বলা হয়েছে গরিবের হক। ধনীর দয়া না। আর জাকাত কেবল টাকার উপর না। ফসলের উপর জাকাত আছে, ফলের উপর জাকাত আছে। এমনকি চারণভূমির গরু ছাগলের উপর জাকাত আছে। বাংলাদেশের সকল উৎপাদিত শস্যের যদি অর্ধেক পরিমাণও জাকাত যোগ্য হয় আর তা থেকে মানুষ জাকাত (উশর) দেয়, দেশে কি কোন খাদ্যাভাব থাকবে?

হয়তো থাকবে, অনেকে লজ্জায় অভাব প্রকাশ করবে না। সেজন্যই আছে আত্মীয়র হক, প্রতিবেশীর হক এবং সুদ মুক্ত ঋণ। আল্লাহ এই সুদমুক্ত ঋণ (কর্জে হাসানাকে) এতো উৎসাহিত করেছেন যে তিনি বলেছেন তিনি নিজে এর প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি করে ফেরত দিবেন।
এমনকি অভাবের সময় একজন চোর যদি এক বেলা খাবারের জন্য চুরি করে তার উপরও তেমন কোন শাস্তি বর্তায় না।
এমন একটি ব্যবস্থা যেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত সেখানে কেউ না খেয়ে থাকলে তাকে আমরা কি বলব? ব্যার্থ, অযোগ্য, অলস ইত্যাদি।

তাই না? এত সুযোগ সুবিধার পরেও না খেতে পাড়া তো ব্যার্থতা।

কিন্তু ওমর (রা) যখন দেখেছেন,  একজন মহিলা না খেয়ে আছেন তখন তিনি বলেছেন এটা আমার অপরাধ। তিনি বলেন নাই যে সমাজ থেকে সুদ উচ্ছেদ করেছি, দূর্নীতি উচ্ছেদ করেছি, দান সাদাকা বৃদ্ধি করেছি, সকল সুযোগ সুবিধা দিয়েছি তারপরেও তুমি না খেয়ে আছো মানে দোষ তোমার। বরং তিনি নিজ কাঁধে করে সে মহিলার ঘরে খাদ্য পৌঁছে দেন।

ওমর (রা.) এর ভৃত্য লজ্জিত হয়ে বলছিল, “হে আমিরুল মুমীনিন, এ আপনি কি করছেন?”

জবাবে তিনি বললেন, “আখিরাতে কি আমার বোঝা তুমি বহন করবে?”

তারপরে তিনি প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ মহিলার ঘরে নিজে খাবার পৌঁছে দিয়ে আসেন।
এটাই হচ্ছে ইসলামের অর্থনীতি। এই সৌন্দর্য দেখেই অমুসলিমরা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল।

সুত্র- মোহাইমিন পাটোয়ারী 

লেখক ও অর্থনীতিবিদ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *