ইলমী মজলিসের ফজিলত

দুনিয়ায় আমরা বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন ধরনের আসর বসাই বা মজলিসে বসি। তার মধ্যে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ, দামি, মূল্যবান এবং মহান আল্লাহর কাছে প্রিয়, পছন্দের মজলিস হলো দ্বীনের মজলিস। মজলিশ অর্থ আসর, বৈঠক, সভা, সমিতি, আলোচনার স্থান ইত্যাদি।
জ্ঞান অর্থ আলো। যার জ্ঞান নেই তার আলোও নেই। আর যার আলো নেই , সে অন্ধকারে নিমজ্জিত-পথভ্রষ্ট। এ জ্ঞান শিখার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো দ্বীনের মজলিস। ইলম হলো জান্নাতের একটি বাগান, যার ফুল কখনো শুকায় না। যার সুভাস চিরন্তন। যে ইলম চর্চা করে, নিয়মিত মজলিসে যায়, ইলমের অন্বেষণ করে, অন্যকে শিক্ষা দেয় মহান আল্লাহতায়ালার কাছে তার মর্যাদা সুমহান ও সুউচ্চ।
হযরত মুহাম্মদ ইবনে সীরীন রহ. বলেন, আমি বসরার মসজিদে গেলাম। সেখানে তখন আসওয়াদ ইবনে সারী বয়ান করছিলেন। মসজিদে উপস্থিত লোকেরা তাঁকে ঘিরে বসা ছিলেন। তাঁদের পিছনে একপার্শ্বে কয়েকজন ফকীহ ফিকাহ সংক্রান্ত আলোচনা করছিলেন। আমি উভয় মজলিসের মাঝে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করলাম। নামায শেষে ভাবলাম, যদি আসওয়াদের মজলিসে বসি, হয়তো তাদের দোয়া কবুল হবে, ফলে তাদের উপর রহমত নাযিল হলে আমার উপরও নাযিল হবে। অতঃপর ভাবলাম, যদি ফিকহের মজলিসে বসি, হয়তো নতুন কোনো মাসআলা জানতে পাব এবং তদানুযায়ী আমল করতে পারব। এমন ভাবতে ভাবতে আমি মসজিদ থেকে বের হয়ে এলাম। সে রাতে স্বপ্নে দেখলাম, আমার নিকট এক আগন্তুক এসে বলল, তুমি যদি ফিকহের মজলিসে বসতে, তাহলে জিবরাঈল আ.কেও তাঁদের সঙ্গে বসা পেতে।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَرَأَى مَجْلِسَيْنِ، أَحَدُهُمَا يَذْكُرُونَ اللَّهَ، وَالْآخَرُ يَتَعَلَّمُونَ الْفِقْهَ، وَيَدْعُونَ اللهَ، وَيَرْغَبُونَ إِلَيْهِ فَقَالَ: كِلَا الْمَجْلِسَيْنِ عَلَى خَيْرٍ، وَأَحَدُهُمَا أَفْضَلُ مِنَ الْآخَرِ، أَمَّا هَؤُلَاءِ فَيَدْعُونَ اللهَ، فَإِنْ شَاءَ أَعْطَاهُمْ، وَإِنْ شَاءَ مَنَعَهُمْ، وَأَمَّا هَؤُلَاءِ فَيَتَعَلَّمُونَ وَيُعَلِّمُونَ الْجَاهِلَ، وَإِنَّمَا بُعِثْتُ مُعَلَّمًا، فَهَؤُلَاءِ أَفْضَلُ، ثُمَّ جَلَسَ مَعَهُمْ.
ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত। একদা নবী মসজিদে প্রবেশ করে দু’টি মজলিস দেখতে পেলেন। একটি মজলিস আল্লাহর যিকিরের। আরেকটি ফিকহের। তখন নবী বললেন, উভয় মজলিসই ভালো। তবে একটি আরেকটির চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এরা আল্লাহর যিকির করছে, দোয়া করছে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে দিতেও পারেন, আবার নাও পারেন। আর এরা নিজেরা শিখছে ও অন্যদেরকে শিখাচ্ছে। আর আমাকে শিক্ষকরূপে প্রেরণ করা হয়েছে। সুতরাং এরাই শ্রেষ্ঠ। এই বলে তিনি তাদের মজলিসে বসে গেলেন।
আপনি যে পায়ে হেঁটে ইলমের মজলিসে আসবেন- সে পা, কান কেয়ামতের মাঠে সাক্ষী দেবে যে, একটা নেক কাজ করেছিলেন। একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় কাজ, দায়িত্ব দ্বীনের সঙ্গে আঠার মতো লেগে থাকা, আল্লাহর সন্তুষ্টি, তাকওয়া ভীতি অর্জন করা।
মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত! তবে তারা ছাড়া যারা ইমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।’ (সূরা আসর, ১-৩)।
রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষকে ভালো কথা শিক্ষা দিয়ে থাকে তার জন্য স্বয়ং আল্লাহতায়ালা, তাঁর ফেরেশতাগণ, আসমানবাসী, জমিনবাসী, এমনকি গর্তের পিপীলিকা পর্যন্ত দোয়া করে (তিরমিযি শরিফ)।
সুত্র_ তাম্বীহুল গাফিলিন
Leave a Reply