হজ্ব ও উমরার গুরুত্ব ও ফযীলত

ইসলামের মূল স্তম্ভগুলোর মধ্যে পঞ্চমটি হজ্ব
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে পঞ্চমটি হলো হজ্ব, যা ঈমান, নামাজ, যাকাত, এবং রোজার পরে আসে। হজ্ব হলো একটি কায়িক এবং আর্থিক ইবাদত, যা সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য ফরয। শরীরিকভাবে সুস্থ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচাপাতির অতিরিক্ত হজ্বের ব্যয় বহন করার সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্ব পালন করা বাধ্যতামূলক।
হজ্ব ফরয হওয়ার শর্তাবলী
হজ্ব প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে একবারই ফরয হয়। একবার ফরয হজ্ব আদায়ের পর পরবর্তী হজ্বগুলো নফল হিসেবে গণ্য হবে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
يا أيها الناس! إن الله كتب عليكم الحج، فحجوا، فقال رجل : أكل عام يا رسول الله؟ فكست حتى قالها ثلاثا، ثم قال : لو قلت نعم لوجبت ولما استطعتم.
হে মানবসকল! আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ্ব ফরয করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্ব করো। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! প্রতি বছর কি হজ্ব করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করল। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তা (প্রতি বছর হজ্ব করা) ফরয হয়ে যেতো, কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হতো না।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৩৭ (৪১২); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১০৬০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৭০৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫০৮; সুনানে নাসায়ী ৫/১১০; শরহে মুশকিলুল আছার, হাদীস : ১৪৭২; সুনানে দারাকুতনী ২/২৮১
হজ্বের তাৎপর্য ও তার প্রতি গুরুত্ব
হজ্ব ফরয হওয়ার সাথে সাথে আদায় করা উচিত। বিনা ওজরে বিলম্ব না করা উত্তম, কারণ বিলম্ব করলে পরে সামর্থ্য হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
من أراد الحج فليتعجل، فإنه قد يمرض المريض وتضل الضالة وتعرض الحاجة.
যে ব্যক্তি হজ্ব করার ইচ্ছে করে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা আদায় করে নেয়। কারণ যে কোনো সময় সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা বাহনের ব্যবস্থাও না থাকতে পারে অথবা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৮৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৮৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৭৩২; সুনানে দারিমী, হাদীস : ১৭৮৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৬৮৭; তবারানী, হাদীস : ৭৩৮
হজ্বের ফযীলত
যে ব্যক্তি হজ্ব করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।-সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৮১১
১. পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মুছে যায়
আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন:
من حج فلم يرفث ولم يفسق غفر له ما تقدم من ذنبه.
যে ব্যক্তি হজ্ব করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৮১১
২. হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান জান্নাত
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত:
العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة.
এক উমরা আরেক উমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। আর হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৭৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৪৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭৩৫৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১৩; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৬৯৫; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৯৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৮৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৭৮২
হজ্বের বিধানসমূহ
হজ্বের সময় অশ্লীল কথা বলা, গুনাহ করা এবং ঝগড়া করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
الحج اشهر معلومات فمن فرض فيهن الحج فلا رفث ولا فسوق ولا جدال في الحج، وما تفعلوا من خير يعلمه الله.
সূরা বাকারা (২) : ১৯৭
হজ্ব ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ এবং প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য এটি পালন করা ফরয। হজ্ব পালন করলে পূর্বের গুনাহ মাফ হয় এবং এর প্রতিদান জান্নাত। তাই হজ্ব ফরয হওয়ার সাথে সাথে তা আদায় করা উচিত এবং এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে যথাসময়ে পালন করা একান্ত প্রয়োজন।
Leave a Reply