হজ্ব করতে গেলে কি কি সাথে নিবেন?

হজ্ব করতে গেলে কি কি সাথে নিবেন?

হজ্ব ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি এবং এটি প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা এ বিধানকে ফরয করে দিয়েছেন তাঁর সামর্থ্যবান বান্দার জন্য। আল্লাহ বলেন-

وَ لِلهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الْبَیْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَیْهِ سَبِیْلًا وَ مَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللهَ غَنِیٌّ عَنِ الْعٰلَمِیْنَ.

মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্ব করা তার জন্য অবশ্যকর্তব্য। আর যে (এই নির্দেশ পালন করতে) অস্বীকার করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ দুনিয়াবাসীদের প্রতি সামান্যও মুখাপেক্ষী নন। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৯৭

মুমিন মাত্রই আল্লাহর ঘরে হাজিরা দেবার জন্যে উদগ্রীব থাকে। সে শুধু প্রতীক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে কখন তার রব তাকে ডেকে বসবেন আর সে লাব্বাইক বলে সেই ডাকে সাড়া দেবে! শুভ্র সফেদ ধবধবে দু টুকরো কাপড় গায়ে জড়িয়ে বলবে-

لَبّيْكَ اَللّٰهُمّ لَبّيْكَ، لَبّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبّيْكَ، إِنّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيْكَ لَكَ.

আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। আমি হাজির, আপনার কোনো শরীক নেই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নিআমত আপনারই এবং সকল রাজত্ব। আপনার কোনো শরীক নেই।

তারপর সে যখন আরো শোনে যবানে নববীতে এই ঘোষণা-

مَنْ حَجّ لِلهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمّهُ.

যে ব্যক্তি একমাত্র অল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্ব করে এবং কোনো অশ্লীল কাজ বা গুনাহে লিপ্ত হয় না, সে যেন সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে বাড়ী ফেরে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫২১

আরো যখন শোনে-

الحَجّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلّا الجَنّةُ.

মাবরূর (মকবুল) হজ্বের প্রতিদান তো কেবল জান্নাতই। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪৯

তখন ঈমানের ছিটেফোঁটা ধারণকারী একজন মুমিনের মনের মাঝে যে কী তোলপাড় সৃষ্টি হয় সেই কাবার পানে ছুটে যাওয়ার জন্য, কীভাবে যে সে নিজেকে সম্বরণ করে- তা সেই কাবার রবই ভালো জানেন! আল্লাহ তাআলা সকল মুমিন মুমিনাতকে হজ্জে মাবরূর নসীব করুন এবং বারবার নসীব করুন- আমীন।

হজ্ব ফরজ করার পেছনে বেশ কিছু উদ্দেশ্য ও জ্ঞানগত কারণ রয়েছে:

আত্মিক পরিশুদ্ধি: হজ্ব একটি আত্মিক যাত্রা যা ব্যক্তিকে গুনাহ থেকে মুক্তি দেয় এবং নিষ্পাপ অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।
সামাজিক সমতা:হজ্বের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ ও সমাজের মানুষ একই স্থানে একত্রিত হয়, যা সামাজিক সমতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে।
আর্থিক উন্নতি: হজ্ব আদায় করা মানুষের আর্থিক উন্নতি ঘটায় এবং দারিদ্র্য দূর করে।
আল্লাহর সন্তুষ্টি: হজ্বের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলে।

এই কারণগুলো হজ্বকে একটি অনন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে পরিণত করেছে, যা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের জীবনে অন্তত একবার আদায় করা উচিত।

হজ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় বিধান নয়, বরং একটি আত্মিক যাত্রা। হজ্বের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছানোর এক অনন্য সুযোগ পান।
এই যাত্রা প্রতিটি মুসলিমের জীবনে এক অনন্য পরিবর্তন আনে এবং তাদের আত্মিক উন্নতির পথ দেখায়।

হজ্ব তিন প্রকারের হয়ে থাকে – ইফরাদ, কিরান এবং তামাত্তু। প্রতিটি প্রকারের নিজস্ব নিয়মনীতি ও মাসায়েল রয়েছে, যা হজ্জের অভিজ্ঞতাকে আরও বিশেষ করে তোলে।
হজ্বের মাসায়েলে পুরুষ ও নারীর মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন, নারীদের মাহরামের সাথে হজ্বে যাওয়া আবশ্যক।

এই যাত্রা প্রতিটি মুসলিমের জীবনে এক অনন্য পরিবর্তন আনে এবং তাদের আত্মিক উন্নতির পথ দেখায়।

হজ্বে ইহরাম অবস্থায় কিছু কাজ করা নিষিদ্ধ। এগুলো হলো:

  • শিকার করা: ইহরাম অবস্থায় কোনো প্রাণীর শিকার করা নিষিদ্ধ।
  • চুল কাটা বা নখ কাটা: ইহরামের সময় চুল কাটা বা নখ কাটা নিষিদ্ধ।
  • যৌন সম্পর্ক স্থাপন: ইহরামের সময় যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা নিষিদ্ধ।
  • বিবাহ বা বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া: ইহরাম অবস্থায় বিবাহ বা বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া নিষিদ্ধ।
  • সুগন্ধি ব্যবহার করা: ইহরামের কাপড়ে বা শরীরে সুগন্ধি লাগানো নিষিদ্ধ।
  • ঝগড়া বা অশান্তি করা: ইহরাম অবস্থায় ঝগড়া বা অশান্তি করা নিষিদ্ধ।

হজ্বের সময় নিম্নোক্ত জিনিসগুলোর প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবহার নিম্নরূপ:

১. ইহরামের কাপড় (স্পেসাল ফেব্রিক ২ পিসের ১ সেট):ইহরাম হল হজ্বের নির্দিষ্ট পোশাক যা সকল প্রকার আলংকারিক বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত। এটি সামাজিক সমতা এবং বিনয়ের প্রতীক।
২. তায়ামূমের মাটি:পানির অভাবে বা অন্য কোনো কারণে ওযু করা সম্ভব না হলে, তায়ামূম করা হয়, যা পবিত্রতা অর্জনের একটি বিকল্প উপায়।
৩. পাসপোর্ট ব্যাগ/কোমর বেল্ট:নিরাপত্তার জন্য এবং পাসপোর্ট, টিকেট এবং অন্যা ন্য মূল্যবান নথি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন।
৪. মিনার ব্যাগ:মিনায় অবস্থানের সময় ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বহনের জন্য।
৫. জুতা রাখার ব্যাগ:মসজিদে প্রবেশের সময় জুতা সংরক্ষণের জন্য।
৬. ৭ দানার তসবী ও পাথর রাখার ব্যাগ:জমরাতে পাথর নিক্ষেপের জন্য পাথর সংরক্ষণের জন্য।
৭. পিঠের ব্যাগ:দীর্ঘ সময়ের জন্য বাইরে থাকার সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বহনের জন্য।
৮. পাম্প বালিশ:মিনা, মুযদালিফা এবং আরাফাতে অবস্থানের সময় আরামদায়ক ঘুমের জন্য।
৯. ছাতা:সূর্যের তাপ এবং বৃষ্টি থেকে রক্ষা করার জন্য।
১০.পাতলা জায়নামাজ:নামাজ আদায়ের জন্য এবং পবিত্র স্থানে বসার জন্য।
১২. মহিলাদের জন্য সান ক্যাপ (ইহরাম অবস্থায় পর্দার জন্য):মহিলাদের পর্দা বজায় রাখার জন্য এবং সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা করার জন্য।
১৩. ৭ পিসের ম্যানিকিউর সেট:ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য।
১৪. ম্যাগনিফাইং পকেট আয়না:ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা এবং সাজসজ্জার জন্য।
১৫. মিশওয়াক:মুখের পরিচ্ছন্নতা এবং দাঁতের যত্নের জন্য, যা সুন্নাহ অনুযায়ী প্রশংসিত।

আপনি কিতাবঘর.কম থেকে নারী ও পুরুষের প্রয়োজনীয় প্যাকেজ দেখে নিতে পারেন।

১। পুরুষ প্যাকেজ

২। নারী প্যাকেজ

এই জিনিসগুলো হজ্বের সময় হাজীদের পবিত্রতা, সুবিধা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে।

যারা হজ্বে যাওয়ার নিয়ত করেছেন, আল্লাহ তাদের সুষ্ঠভাবে হজ্ব পালনের তাওফিক দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *