যে সময়গুলো নষ্ট হচ্ছে সেগুলোই আসল সময়

এক এক মুহূর্তের সমষ্টিই তো জীবন। প্রতিটি মুহূর্ত সময়ের একটি অংশ। সময়ের আলাদা কোনো অস্তিত্ব যেহেতু মানুষ অনুভব করে না তাই সময়ের বয়ে চলাও অনুভূত হয় না।
وإنا لفي الدنيا كركب سفينة * نظن وقوفا، والزمان بنا يجري
আমরা দুনিয়ার বুকে যেন নৌকার যাত্রী। মনে হয়, ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। অথচ সময় আমাদের নিয়ে বয়ে চলেছে।
নৌকা কিংবা গাড়ির আরোহী কোথাও যাওয়ার সময় মনে করে , সে বসে আছে। অথচ সে চলছে। ঠিক তেমনি সময়ও তার কাজ করে চলেছে। সময় শেষ হয়েই যায়। বয়স বাড়ার অর্থ জীবন কমে যাওয়া। অথচ আমরা একটুও ভাবি না। আমাদের অবস্থা হল, কবির ভাষায়
الوقت أنفس ما عُنِيت بحفظه * وأراه أسهل ما عليك يضيع
সংরক্ষণ করা যায় এমন বস্তুর মধ্যে সময় সবচেয়ে মূল্যবান/অথচ দেখছি, এটিই সবচেয়ে সহজে তোমার কাছে নষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু আমাদের আকাবির কী করতেন? তাঁদের রমযান কেমন ছিল? শেষ দশক তারা কীভাবে কাটাতেন? এসব তাদের জীবনী-গ্রন্থ থেকে পাঠ করা উচিত। শায়খুল হাদীস যাকারিয়া কান্ধলভী রাহ.-এর পুস্তিকা ‘আকাবির কা রমযান’ও অধ্যয়ন করা যেতে পারে।
শেষ দশকের গুরুত্ব উপলব্ধির জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, এটিই হচ্ছে সুন্নত ইতিকাফের সময়। আর লায়লাতুল কদরেরও প্রবল সম্ভাবনা শেষ দশকেই হওয়ার। হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি লায়লাতুল কদরের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সে তো সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হয়।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৪৪
সুতরাং শেষ দশককে যে নষ্ট করে সে প্রকৃতপক্ষে নিজের সব কল্যাণ বিসর্জন দেয়।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বর্ণনা করেন
كان رسول الله صلى الله عيله وسلم يجتهد في العشر الأواخر ما لا يجتهد في غيره.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকে সবচেয়ে বেশি মেহনত করতেন।
সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭৫
তিনি আরো বলেন,
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل العشر أحيا الليلَ، وأيقظ أهلَه، وجّدَّ وَشَدَّ المِئْزَرَ.
শেষ দশক শুরু হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা রাত জাগতেন। পরিবারের লোকদেরকেও জাগাতেন। অনেক মেহনত করতেন। এমনকি কোমর বেঁধে নিতেন।
সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭৪
قال رسول الله صلى الله عيله وسلم : التمسوها في العشر الأواخر، يعني ليلة القدر، فإن ضعف أحدكم أو عجز فلا يُغْلَبَنَّ على السبع البواقي.
তোমরা শেষ দশকে লায়লাতুল কদর অন্বেষণ কর। তোমাদের কেউ দুর্বল কিংবা অক্ষম হলে সে যেন অবশিষ্ট সাত রাতের বিষয়ে পরাজিত না হয়। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৫ (২৭৪১)
Leave a Reply