বৃষ্টি ও বর্ষার সুন্নত আমল

বৃষ্টি আল্লাহর অফুরন্ত রহমতের একটি নিদর্শন, যার মাধ্যমে তিনি পৃথিবীতে কল্যাণ, রিজিক ও জীবনের গতি বিধান করেন। বৃষ্টি এলে হৃদয় প্রফুল্ল হয়, তৃষ্ণার্ত ধরিত্রী শান্তি পায়। এটি একদিকে যেমন রহমতের বাহক, অন্যদিকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের জন্য পরীক্ষাও হতে পারে। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টি নামলে আল্লাহর দরবারে উপকারী ও কল্যাণকর বৃষ্টির জন্য দোয়া করতেন।
ঝড় ও ঝঞ্ঝা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘মহাগভীর সমুদ্রতলের অন্ধকারের মতো, যাকে আচ্ছন্ন করে তরঙ্গের ওপর তরঙ্গ, যার ঊর্ধ্বে মেঘপুঞ্জ, গাঢ় অন্ধকার স্তরের পর স্তর। কেউ যদি নিজের হাত বের করে, তবু সে তা দেখতে পাবে না। আল্লাহ যাকে আলো দান করেন না, তার জন্য কোনো আলো নেই।’ (সুরা আন-নূর, আয়াত: ৪০)।
মেঘ ও বৃষ্টি সম্পর্কে কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তা দিয়ে মৃতপ্রায় ভূমিকে তিনি জীবিত করেন, তাতে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তার ঘটান। এতে বায়ুর দিক পরিবর্তন এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৬৪)। তিনি আরও বলেন, ‘আর তিনি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন, তা দ্বারা তোমাদের জীবিকাস্বরূপ ফলমূল উৎপাদন করেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২)। বৃষ্টি দেখলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘রহমাতান’ অর্থাৎ ‘এটা আল্লাহর রহমত’ (মুসলিম: ১৯৬৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়।’ (তাবরানি: ৫৭৫৬)। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন বৃষ্টি হতো, তখন রাসুল (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ছাইয়্যাবান নাফিয়াআহ’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি এই বৃষ্টিকে প্রবহমান ও উপকারী করে দিন।’ (নাসায়ি: ১৫২৩; ইবনে মাজাহ: ৩৮৮৯)
আকাশে মেঘ উঠলে নবী করিম (সা.) যাবতীয় নফল ইবাদত বন্ধ করে দিতেন, এমনকি নামাজ সংক্ষিপ্ত করতেন। তখন তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।’ বৃষ্টি হলে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য বরকতময় ও সুমিষ্ট পানি দান করুন।’ (আবু দাউদ: ৫১৯৯)
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে দোয়া পড়তেন, ‘হে আল্লাহ! এই মেঘমালার অনিষ্ট থেকে আমরা পানাহ চাই।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮৮৯)। বিদ্যুৎ–চমক, মেঘের গর্জন ও বজ্রপাতের সময় তিনি দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনার গজব দ্বারা আমাদের ধ্বংস করবেন না, আপনার আজাব দ্বারা আমাদের হত্যা করবেন না; তার আগেই আমাদের ক্ষমা করে দিন।’ (তিরমিজি: ৩৪৫০)
রহমতের বৃষ্টির জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের ওপর বারি বর্ষণ করুন এবং যে বৃষ্টি আপনি পাঠাবেন, তা যেন আমাদের জন্য দীর্ঘকালীন রিজিক ও জীবিকার উৎস হয়।’ (আবু দাউদ: ১১৭৩)
‘হে আল্লাহ! আপনার বান্দাগণ ও প্রাণিকুলকে পানি দিন, আপনার রহমত বিস্তৃত করুন এবং মৃত ধরিত্রীকে জীবিত করুন।’ (মুআত্তা মালিক: ৪৪৯)
বৃষ্টির পানি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত। বৃষ্টিতে ভেজা সুন্নত। হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমরা একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। তখন তিনি তাঁর জামার অংশ সরিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা তাঁর শরীরে লাগতে দেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, “কারণ, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে, খুব অল্প সময় আগেই।’” (মুসলিম: ১৯৬৮)
যখন অতিবৃষ্টি হতো, তখন রাসুল (সা.) দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি বর্ষণ করুন, আমাদের ওপর নয়।’ (নাসায়ি: ১৫২৭)। ‘হে আল্লাহ! পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা ও বন-জঙ্গলে বৃষ্টি বর্ষণ করুন।’ (বুখারি: ১০১৩)।
বৃষ্টি থেমে গেলে রাসুল (সা.) দোয়া করতেন: ‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহি’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণায় আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।’ (বুখারি: ১০৩৮)
Leave a Reply