বিপদ নিয়ে ইসলামের উক্তি

জীবন একটি পরীক্ষার মঞ্চ, যেখানে বিপদ আমাদের ধৈর্য, ইমান ও আল্লাহর ওপর ভরসার পরীক্ষা নেয়। রোগ, দারিদ্র্য, সামাজিক অশান্তি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ—এসব বিপদ ইসলামে শুধু কষ্ট নয়, বরং আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগও বটে। কোরআন ও হাদিসে বিপদ মোকাবিলার জন্য ধৈর্য, দোয়া ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

কোরআনে বিপদ নিয়ে উক্তি
কোরআন বিপদকে আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে বর্ণনা করে। আল্লাহ বলেন, ‘আমরা অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, ধনসম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে। তবে ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)

আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো বিপদই আপতিত হয় না। যে আল্লাহর প্রতি ইমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বজ্ঞ।’ (সুরা তাগাবুন, আয়াত: ১১)

ইমাম ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘বিপদ মুমিনের জন্য আল্লাহর পরীক্ষা এবং তার গুনাহ মাফের মাধ্যম। (তাফসির ইবনে কাসির, ১/৪৫৬, দারুস সালাম, ২০০০)
হাদিসে বিপদ নিয়ে উক্তি
নবীজি (সা.) বিপদের সময় ধৈর্য ও দোয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কোনো মুসলিমের ওপর এমন কোনো বিপদ আসে না, এমনকি একটি কাঁটার আঘাতও না, যার মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করেন না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৬৪১)

আরেকটি হাদিসে নবীজি বলেন, ‘যখন কোনো মুমিন বিপদে পড়ে এবং বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহ তার জন্য বিপদের চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩,৪৩৬)।

ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘বিপদ মুমিনের জন্য আল্লাহর রহমত ও কাফফারার মাধ্যম, যা তাকে আখিরাতের জন্য প্রস্তুত করে।’ (রিয়াদুস সালিহীন, ১/২৩৪, দারুল কুতুব, ১৯৯৯)

বিপদের সময়ের দোয়া
বিপদে আল্লাহর কাছে দোয়া করা ইসলামের একটি মৌলিক শিক্ষা। একটি প্রচলিত দোয়া হলো:

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আজিমুল হালিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদি ওয়া রাব্বুল আরশিল কারিম।

অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি মহান ও সহিষ্ণু। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি সুউচ্চ আরশের প্রতিপালক, আকাশ ও পৃথিবীর রব এবং সম্মানিত আরশের রব। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪৫)

আরেকটি দোয়া:

উচ্চারণ: হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম।

অর্থ: আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আমি তাঁর ওপর ভরসা করি, তিনি মহান আরশের রব। (সুরা তাওবা, ৯: ১২৯)

ইসলাম বিপদকে শুধু কষ্ট হিসেবে দেখে না, বরং এটি আল্লাহর পরীক্ষা ও গুনাহ মাফের মাধ্যম। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য প্রতিটি বিষয়ই কল্যাণকর। সুখে সে কৃতজ্ঞ থাকে, আর বিপদে ধৈর্য ধরে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৮৯৫)

ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘বিপদ মুমিনকে আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যায় এবং তার ইমানকে শক্তিশালী করে।’ (মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া, ১০/২৮৭, দারুল ওয়াফা, ২০০১)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *