অসুস্থ অবস্থায় একজন প্রকৃত মুমিনের লক্ষণ কী?

সুস্থতা আল্লাহর বড় নেয়ামত। সুস্থ না থাকলে কোনো ভালো বা কল্যাণকর কাজ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। রাসুল (সা.) সব সময় সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করতেন। সাহাবায়ে কেরামকেও তিনি সুস্থতার দোয়া করতে নির্দেশ দিতেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে ক্ষমা, নিরাপত্তা ও সুস্থতা চাও, ইমানের পর নিরাপত্তা ও সুস্থতাই সবচেয়ে উত্তম নেয়ামত।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৫৫৮ ও সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ৫,৪৯৪)

অসুস্থতা আল্লাহর পরীক্ষা। আল্লাহর কাছে অসুস্থতা চাওয়া যাবে না। তবে আল্লাহ যদি অসুস্থতা দেন, মুমিন বান্দার ক্ষেত্রে তাও নেয়ামত হয়ে উঠতে পারে। কারণ আল্লাহ যখন তার কোনো মুমিন বান্দাকে অসুস্থতা দান করেন এবং সে ধৈর্য ধারণ করে অর্থাৎ হাহুতাশ না করে, বিলাপ না করে, মানুষের কাছে অভিযোগ না করে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার কাছে রোগমুক্তি প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাআলার কাছে এই অসুস্থতার জন্যও সে প্রতিদান লাভ করে। আল্লাহ অসুস্থতার কষ্টের বিনিময়ে তার গুনাহ মাফ করে দেন, মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।

কোরআনের সবচেয়ে সুন্দর আয়াতগুলোর একটিতে ইব্রাহিম (আ.) তার কওমের লোকদের কাছে তার দৃষ্টিতে আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেছেন যে, ‘(আল্লাহ তিনি) যিনি আমাকে খাওয়ান এবং পানীয় দান করেন। আর রোগাক্রান্ত হলে তিনি আমাকে নিরাময় দেন।’ (সুরা শোআরা, আয়াত: ৭৯- ৮০)

অসুস্থ হলে করণীয়

প্রথমে মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর অনুমতিতেই আমরা অসুস্থ হই। এরপর আমরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই, তিনি আমাদের ওষুধ দেন। হয়তো কখনো কখনো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, সার্জনের হাত দিয়ে আল্লাহই আমাদের আরোগ্য দেন। আমরা যখন ওষুধ খাই, এমনকি সাধারণ মাথা ব্যথার জন্যও, আমরা ভাবব না যে, ওষুধ আমাকে আরোগ্য দিয়েছে, বরং আল্লাহর ইচ্ছায় ওষুধ আমার ওপর কার্যকর হয়েছে।

শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি আমাদের হৃদয়ও রুগ্‌ণ হতে পারে। আল্লাহ কোরআনে উল্লেখ করেছেন, ‘তাদের অন্তরসমূহে রয়েছে ব্যাধি। সুতরাং আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১০)

অন্তরের অসুখ হলে সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় না। হাদিসে এসেছে, ‘মানুষের সঙ্গে শয়তানের একটি ছোঁয়া রয়েছে এবং ফেরেশতার একটি ছোঁয়া রয়েছে। শয়তানের ছোঁয়া হলো অমঙ্গলের ভীত প্রদর্শন এবং সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। পক্ষান্তরে ফেরেশতার ছোঁয়া হলো মঙ্গলের সুসংবাদ প্রদান এবং সত্যের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন। সুতরাং যে ব্যক্তি ফেরেশতার ছোঁয়া অনুভব করবে সে যেন মনে করে যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর এর জন্য শুকরিয়া আদায় করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ভিন্নতর অবস্থা অনুভব করবে সে যেন শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চায়।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩,২৫৬)

রোগব্যাধি স্বাভাবিক ব্যাপার, এটা জীবনেরই একটা অংশ এবং জীবনে আমরা যেসব পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাই এটা তার মধ্যে একটি। কিন্তু অসুখের অবস্থায় আল্লাহ আমাদের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করেন? তিনি চান, আমরা কৃতজ্ঞ হই, ধৈর্য ধারণ করি এবং আমাদের শারীরিক অসুস্থতা যেন আমাদের আল্লাহর আরও নিকটবর্তী করে। আর বিশেষভাবে অন্তরের ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে আমরা দোয়া করতে পারি এভাবে, ‘আল্লাহুম্মা আতি নাফসি তাকওয়াহা ওয়া যাক্কিহা আংতা খাইরু মান যাক্কাহা আংতা ওয়ালিয়্যুহা ওয়া মাওলাহা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার মনে আল্লাহ ভীতি দান করো, আমার মনকে পবিত্র কর, তুমিই তো আত্মার পবিত্রতা দানকারী, তুমিই তো হৃদয়ের মালিক ও অভিভাবক। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬,৬৫৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *