ঐতিহাসিক বদর দিবস

আজ ১৭ ই রমজান

তুলসি গ্যাবার্ড, যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, সম্প্রতি (১৭ মার্চ, ২০২৫) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের (বিশেষ করে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান প্রভৃতি) ওপর “দীর্ঘদিনের নিপীড়ন, হত্যা এবং অপব্যবহার” নিয়ে মার্কিন সরকার ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্বেগের কথা বলেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশে “ইসলামি সন্ত্রাসবাদ” এবং “ইসলামি খিলাফত” প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কথিত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম রয়েছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য “একটি কেন্দ্রীয় উদ্বেগের বিষয়”।

এই মন্তব্য নিয়ে আমার মতামত হলো: গ্যাবার্ডের বক্তব্যে কিছু গুরুতর দাবি করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলো কতটা তথ্যভিত্তিক বা বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে, বলেছে যে এটি “ভিত্তিহীন” এবং “বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর”। তারা দাবি করেছে যে, গ্যাবার্ড কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ বা অভিযোগ উল্লেখ না করে পুরো দেশকে একটি “অযৌক্তিক ও বিস্তৃত” অভিযোগের আওতায় ফেলেছেন।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর। তবে, এই ঘটনাগুলোকে সরকার “রাজনৈতিক” প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা করেছে, যেখানে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে, ধর্মীয় কারণে নয়। বাংলাদেশের দাবি, তারা ঐতিহ্যগতভাবে একটি “সমন্বয়ী ও শান্তিপূর্ণ” ইসলাম চর্চা করে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। গ্যাবার্ডের “ইসলামি খিলাফত” এর উল্লেখ অবশ্য বাংলাদেশের বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না, কারণ দেশটিতে এমন কোনো প্রকাশ্য আন্দোলন বা লক্ষ্য দেখা যায়নি।

অন্যদিকে, গ্যাবার্ডের বক্তব্য ভারতীয় মিডিয়ার মাধ্যমে আসা এবং তিনি যে সময়ে ভারতে ছিলেন (১৬-১৮ মার্চ, ২০২৫), তা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষিতে কিছুটা সন্দেহের জন্ম দিতে পারে। ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের, এবং গ্যাবার্ডের হিন্দু-আমেরিকান পরিচয় ও ভারতের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক (যেমন মোদির সঙ্গে বন্ধুত্ব) এই ধারণাকে আরও জোরালো করতে পারে। তবে, তার মন্তব্য শুধু ভারতীয় প্রভাবের ফল নয়, বরং ট্রাম্প প্রশাসনের “ইসলামি সন্ত্রাসবাদ” বিরোধী বৃহত্তর নীতির অংশও হতে পারে।

আমার মনে হয়, গ্যাবার্ডের বক্তব্যে অতিরঞ্জন আছে এবং এটি বাংলাদেশের জটিল বাস্তবতাকে সরলীকৃত করে ফেলেছে। এটি কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে। তবে, বাংলাদেশেরও উচিত এই অভিযোগগুলোর জবাবে স্বচ্ছ তথ্য ও প্রমাণ দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে নিজেদের অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *