রমজানের পবিত্রতা

আত্মশুদ্ধি, সংযম ও ইবাদতের আধ্যাত্মিক যাত্রা

রমজান হলো আত্মশুদ্ধি, সংযম ও ইবাদতের মাস। এটি শুধু সিয়াম সাধনার মাস নয়, বরং আল্লাহর বিশেষ রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের প্রথম ১০ দিন হলো রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের, আর শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির।’ (মুসনাদ আহমদ)

এ কারণে রমজানের প্রথম ১০ দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কারণ এটি রহমতের সময়। যারা এ সময়ে আন্তরিকতার সঙ্গে ইবাদত করেন, তারা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করেন। এ সময়টিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো উচিত, যাতে আমরা পরবর্তী দিনগুলোতে আরো বেশি অনুপ্রাণিত হতে পারি।

রমজানের প্রথম ১০ দিনের রহমত
রমজানের প্রথম ১০ দিন আল্লাহর অফুরন্ত দয়ার প্রতিচ্ছবি। এ সময় আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ বর্ষণ করেন এবং তাদের জন্য জান্নাতের পথ প্রশস্ত করেন।

হাদিসে এসেছে, ‘যখন রমজান মাস শুরু হয়, তখন জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় আর জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়।’ (বুখারি, মুসলিম)

এটি আমাদের জন্য আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ যে, আমরা সহজেই নেক কাজ করতে পারি এবং পাপ থেকে দূরে থাকতে পারি। তাই আমাদের উচিত এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়া।

রমজানের প্রথম ১০ দিনের করণীয় ইবাদত
রমজানের প্রথম ১০ দিনে বিশেষ কিছু ইবাদত করা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের কথা তুলে ধরা হলো :
১. নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
নামাজ ইসলামের মূল স্তম্ভগুলোর একটি। এ মাসে আমাদের উচিত সময়মতো এবং মনোযোগসহকারে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।
২. তাহাজ্জুদ নামাজ

রমজানের প্রথম ১০ দিনে রাতের শেষ ভাগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়।
৩. কোরআন তিলাওয়াত

রমজান কোরআন নাজিলের মাস। এ মাসে কোরআন তিলাওয়াত করা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত কয়েক পৃষ্ঠা কোরআন পড়ার চেষ্টা করা উচিত।
৪. জিকির ও দোয়া

রমজানের প্রথম ১০ দিনে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করা উচিত। বিশেষ কিছু দোয়া ও জিকির করা যেতে পারে, যেমন : (উচ্চারণ : রব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতা খাইরুর রাহিমিন)।
অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর, দয়া কর। তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’

৫. সাদকা ও দান
সদকা ও দান-খয়রাত করা রমজানে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। আমাদের উচিত গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা, যাতে তারাও রমজানের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।

৬. ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা)
রমজানের প্রথম ১০ দিনে আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে তওবা করা এবং পাপমুক্ত জীবনের জন্য তার সাহায্য চাওয়া।

৭. সুন্নত আমল
বেশি বেশি সুন্নতের আমল করা। যেমনÑ সালামের প্রচলন বৃদ্ধি করা, হাসিমুখে কথা বলা, মানুষের উপকার করা, মিসওয়াক ব্যবহার করা ইত্যাদি।

রমজানের প্রথম ১০ দিন হলো বিশেষ রহমতের দিন। যারা এই দিনগুলোতে আন্তরিকতার সঙ্গে ইবাদত করেন, তারা আল্লাহর অশেষ রহমত লাভ করেন। আমাদের উচিত এ সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র মাসের রহমত অর্জনের তওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *