সম্পদ আত্মসাৎকারীর পরিণতি ভয়াবহ

হজরত কাতাদাহ ইবনে নোমান (রা.) নামে এক সাহাবি ছিলেন। তিনি বর্মসহ কিছু সরঞ্জাম একটা আটার বস্তায় ভরে সংরক্ষণ করেছিলেন। তুমা বাসির ইবনে উবাইরিক নামে একজন ছিল তাঁর প্রতিবেশী। সে ছিল মদিনার বনি জাফর গোত্রের সদস্য এবং প্রতারক। বস্তাসহ বর্মটি চুরি করে সে জায়েদ ইবনে সামিন নামের এক ইহুদির কাছে লুকিয়ে রাখে। দুর্ভাগ্যক্রমে বস্তার এক পাশে ছিল ছিদ্র। সেই ছিদ্রপথে আটা ছড়িয়ে পড়ল ইহুদি লোকটির বাড়ি পর্যন্ত।

কাতাদাহ (রা.) বস্তাটি যথাস্থানে না পেয়ে খুঁজতে শুরু করলেন। তুমা ইবনে উবাইরিককে তিনি বস্তার কথা জিজ্ঞাসা করলে বিষয়টি সে অস্বীকার করল। কাতাদাহ আটার চিহ্ন খুঁজে পেয়ে সেটি অনুসরণ করতে করতে জায়েদ ইবনে সামিনের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছলেন। সেখানে বর্মটি পেয়ে সেটি উদ্ধার করে আনলেন।

জায়েদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বললেন, ‘আমি চুরি করিনি। বর্মটি তুমা আমার কাছে রেখে গিয়েছিল।’ অনেকে তাঁর কথার সত্যতারও সাক্ষ্য দিল। কিন্তু তুমা ঘটনাটি পুরোপুরি অস্বীকার করল। ঘটনার সত্যতা আঁচ করতে পেরে বনি জাফর গোত্রের লোকেরা চতুর্যের আশ্রয় নিয়ে জোট বাঁধল। সবাই দল বেঁধে রাসুলুল্লাহর (সা.) কাছে গিয়ে আবেদন করে বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) এ ঘটনার সঙ্গে তুমার কোনো সম্পর্ক নেই। বর্ম পাওয়া গেছে ইহুদির বাড়িতে। চুরি সে–ই করেছে। আপনি তুমার পক্ষ নিয়ে ইহুদিটিকে দোষী সাব্যস্ত করুন। নইলে আমাদের গোত্রের সম্মান থাকে না।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বাহ্যিক প্রমাণাদি দেখে জায়েদকেই দোষী বলে মনে করলেন। তাঁকে চুরির শাস্তি দেওয়ার জন্য মন স্থির করলেন। তখন সেই ইহুদি ব্যক্তিটির বক্তব্যের সত্যতা এবং চুরির সঙ্গে তুমার সম্পৃক্ততার বর্ণনা করে কোরআনে পূর্ণ দুটি রুকু নাজিল হয়।

আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে সেই মতো বিচার করতে পারো আল্লাহ তোমাকে যেমন জানিয়েছেন। আর তুমি বিশ্বাসঘাতকদের জন্য তর্ক কোরো না। আর তুমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। আর তুমি তাদের পক্ষে কথা বোলো না, যারা নিজেদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসঘাতক পাপিষ্ঠকে ভালোবাসেন না। এরা মানুষের কাছ থেকে লুকাতে চায়, কিন্তু আল্লাহর কাছে লুকাতে পারে না। আর আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন, যখন তারা রাত্রে এমন বিষয়ে পরামর্শ করে, যা তিনি পছন্দ করেন না। আর তারা যা-ই করে তা আল্লাহর জ্ঞানের আয়ত্তে দেখো, তোমরাই পার্থিব জীবনে তাদের পক্ষে কথা বলেছ। কিন্তু কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে কে তাদের পক্ষে কথা বলবে, বা কে তাদের জন্য ওকালতি করবে? আর কেউ মন্দ কর্ম করে বা নিজের ওপর অত্যাচার করে পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল ও পরম দয়াময় হিসেবে। আর যে পাপ কাজ করে, সে তা দিয়ে নিজেরই ক্ষতি করে, আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ তত্ত্বজ্ঞানী।

কেউ কোনো দোষ বা পাপ করে পরে তা কোনো নির্দোষ ব্যক্তির ওপর আরোপ করলে সে মিথ্যা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করবে। আর তোমার ওপর যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত, তবে তাদের একদল তো তোমাকে পথভ্রষ্ট করতে চাইতই, কিন্তু তারা নিজেদেরকে ছাড়া আর কাউকে পথভ্রষ্ট করে না ও তোমার কোনোই ক্ষতি করতে পারে না। আল্লাহ তোমার কাছে কিতাব ও হিকমত অবতীর্ণ করেছেন, আর তুমি যা জানতে না, তা তিনি তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, আর তোমার ওপর আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে। তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোনো ভালো নেই, তবে যে দানখয়রাত, সৎ কাজ ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের নির্দেশ দেয় (তার মধ্যে ভালো আছে), আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যে এই রকম করবে তাকে আমি মহাপুরস্কার দেব। আর যদি কারও কাছে সৎ পথ প্রকাশ হওয়ার পরও সে রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে ও বিশ্বাসীদের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে সে যেদিকে ফিরে যায়, আমি সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব ও জাহান্নামেই তাকে পোড়াব; আর বাসস্থান হিসেবে তা কতই-না জঘন্য। (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৫–১১৫)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *