রিজিক নির্ধারিত কিন্তু তা অর্জনে প্রচেষ্টা জরুরি

প্রত্যেক মানুষের রিজিক নির্ধারিত। একজন মানুষ যা কিছু পান বা লাভ করেন, পূর্বনির্ধারিত ছিল বলে তিনি তা পেয়ে থাকেন। যা কিছু মানুষ পান না বা লাভ করেন না, নির্ধারিত ছিল না বলেই তিনি তা পাননি বা লাভ করেননি। নির্ধারিত রিজিকে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। কেউ এক মুঠো বেশি রিজিক পাবে না, এক মুঠো কমও পাবে না। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদের পৃথিবীতে ঠাঁই দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য তাতে রেখেছি জীবনোপকরণ। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১০)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আপন আপন মাতৃগর্ভে তোমরা প্রত্যেকেই চল্লিশ দিন পর্যন্ত (শুক্র হিসেবে) জমা ছিলে। তারপর চল্লিশ দিন রক্তপিণ্ড হিসেবে, এরপর চল্লিশ দিন গোশতের পিণ্ড হিসেবে জমা ছিলে। এরপর আল্লাহ–তাআলা একজন ফেরেশতা পাঠান এবং বান্দার রিজিক, মৃত্যু, দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য—এ চারটি বিষয় লেখার আদেশ প্রদান করেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৫৯৪)

রিজিক আল্লাহ–তাআলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত। তার তালাশ করা বা অনুসন্ধান করা বান্দার দায়িত্ব। রিজিক আল্লাহ–তাআলার হাতে, চেষ্টা বান্দার হাতে। আল্লাহ–তাআলা রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন বলে তার মানে এই নয়, সে রিজিক আপনা–আপনি আমাদের কাছে এসে হাজির হবে। আকাশ থেকে রিজিক নাজিল হবে, আর বান্দা কেবল তা গ্রহণ করে ধন্য হবে। আল্লাহ–তাআলার ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে প্রয়োজন ও চাহিদা অনুয়ায়ী রিজিক অনুসন্ধান করতে হবে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা জুমআ, আয়াত: ১০)

মুত্তালিব ইবনে হানতাব (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় জিবরাইল (আ.) আমার অন্তরে অহি ঢেলে দিয়েছেন, অবশ্যই রিজিক শেষ হওয়ার আগে কারও মৃত্যু হয় না। সুতরাং তোমরা হারাম ছেড়ে হালাল পথে রিজিকের অনুসন্ধান করো।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ২৫৪)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)–র বর্ণনায় আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হালাল রিজিক অন্বেষণ করা দ্বীনের ফরজগুলোর পর অন্যতম ফরজ।’ (সুনানুল কুবরা, বাইহাকি, খণ্ড ৬, হাদিস: ১১,৬৯৫)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘হে মানুষ! আল্লাহ–তাআলাকে ভয় করো এবং উত্তম ও ভারসাম্যপূর্ণ পন্থায় রিজিক অনুসন্ধান করো। কারণ কোনো প্রাণী তার জন্য বরাদ্দকৃত রিজিক প্রাপ্ত না হয়ে মৃত্যুবরণ করবে না। যদিও রিজিক লাভ করাটা তার জন্য বিলম্বিত হয়। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো ও ভারসাম্যপূর্ণ পন্থায় রিজিক তালাশ করো। যা হালাল, তা গ্রহণ করো; যা হারাম, তা পরিত্যাগ করো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২,১৪৪)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *