পরস্পরের কল্যাণ কামনা মুসলমানের অধিকার

সাহাবি হজরত তামিম আদ দারি (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘দ্বীন হচ্ছে যথাযথভাবে কল্যাণ কামনা করা।’

কথাটি নবী করিম (সা.) তিনবার বললেন। আমরা বললাম, কার জন্য? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য, তার কিতাবের (কোরআন) জন্য, তার রাসূলের জন্য, মুসলিম নেতাদের জন্য এবং সাধারণ মুসলমানের জন্য।
-সহিহ মুসলিম 

হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে অঙ্গীকার করেছি, নামাজ প্রতিষ্ঠার জন্য, জাকাত প্রদানের জন্য এবং সব মুসলমানের কল্যাণ কামনার জন্য।
উল্লেখিত হাদিসসমূহে আরবি ‘নাসিহা’ শব্দ রয়েছে। যার ভাবার্থ এক কথায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে অল্প কথায় এভাবে বলা যায়, প্রত্যেকের যথাযথ হক বা অধিকার সঠিকভাবে আদায় করাই হচ্ছে ‘নাসিহা বা নসিহত। ’ 
আল্লাহর জন্য অধিকার হচ্ছে, তার সঙ্গে কোনো প্রকার শরিক না করা। তার কিতাবের অধিকার হচ্ছে, তা যথাযথভাবে তেলাওয়াত করা, জানা-বুঝা ও মান্য করা।  

আর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য অধিকার হচ্ছে, যথাযথভাবে কথা ও কর্মে তার আনুগত্য করা। মুসলিম নেতাদের জন্য অধিকার হচ্ছে, তার যথাযথ আনুগত্য করা। ভুল-ত্রুটি দেখলে ধৈর্যধারণ করা এবং সার্বক্ষণিক তার কল্যাণ কামনা করা। আর সাধারণ মুসলমানের জন্য অধিকার হচ্ছে, পরস্পরে পরস্পরের কল্যাণ কামনা করা। আর নেতার জন্য অধিকার হচ্ছে তার কাজে সহায়তা করা। তার বিরোধিতা না করা, তার ক্রটি দেখলে ধৈর্যধারণ করা।

মুসলমানের জন্য জরুরি হচ্ছে, পবিত্র কোরআন ও সহিহ হাদিস জানা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। জেনে না মানা বা না মানার উদ্দেশ্যে জানা মুনাফিকের আমল। কাজেই মেনে চলার উদ্দেশ্যে জানা একান্ত কর্তব্য। এটা মুমিনের বৈশিষ্ট্যও বটে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাত হয়েছে, ‘মুমিন তারাই, যারা বলে আমরা শ্রবণ করেছি (জেনেছি) ও মান্য করেছি। ’ –সূরা বাকারা: ২৮৫

আলোচ্য কোরআনের আয়াত ও হাদিসদ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয় যে, জাহান্নাম থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে এবং জান্নাত লাভের আশায় আলেমদের নিকট কোরআন-হাদিস শুনতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। এখানে যেহেতু আমল করার উদ্দেশ্যে শুনতে হবে, কাজেই সত্য-মিথ্যা যাচাই করে শুনা একান্ত জরুরি।

কারণ বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে বানোয়াট ও জাল হাদিস রয়েছে এবং মনগড়া তাফসির রয়েছে।  

দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, আমাদের দেশের প্রচুর বক্তা কিংবা লেখক যাচাই-বাছাই করে বক্তব্য পেশ করেন না, কিংবা লেখা লেখেন না। তাই আমাদের জন্য জরুরি হচ্ছে, তাদের বক্তব্যকে যাচাই-বাছাই করে আমল করা। অন্যথায় আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো।  

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শেষ জামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব অলিক কথা-বার্তা উপস্থাপন করবে, যা না তোমরা শুনেছ না তোমাদের বাপ-দাদা শুনেছে। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে বেঁচে থাকো এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে বাঁচাও। অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকো। যাতে তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে না পারে এবং তোমাদের বিপথগামী করতে না পারে। ’ –সহিহ মুসলিম

ইসলাম এমন একটি শরিয়ত, যার প্রতিটি কাজ দলিলভিত্তিক। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবী! আপনি বলুন, আমি আল্লাহর পথে ডাকি স্পষ্ট দলিল সহকারে। ’ –সূরা ইউসুফ: ১০৮

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে কোনো ব্যাপারে দাবীদারকে দলিল পেশ করতে হবে। ’ –তিরমিজি 

তাই মানুষকে কোনো কিছু জানাতে হলে, স্পষ্টভাবে দলিল সহকারে জানাতে হবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘যে বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে আলেমদের নিকট স্পষ্ট দলিল সহকারে জেনে নাও। ’ –সূরা আন নাহল: ৪৩

এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যারা দলিল সহকারে শরিয়ত জানার চেষ্টা করে না, তারা আল্লাহর আদেশ অমান্যকারী। বানোয়াট কাহিনি, বুজুর্গানে দ্বীনের অলৌকিক ঘটনা, অলি-দরবেশের গল্প-কাহিনি ও মিথ্যা তাফসির মুসলমানদেরকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *