আল্লাহ কাউকে সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না

আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না, সে তা-ই পায়, যা সে উপার্জন করে এবং তা-ই তার ওপর বর্তে, যা সে করে। হে আমাদের পালনকর্তা!
যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের ওপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর অর্পণ করেছ। হে আমাদের প্রভু! এবং আমাদের দ্বারা ওই বোঝা বহন করিয়ো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই।
আমাদের পাপ মোচন করো। আমাদের ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি দয়া করো। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করো।
আয়াতের বিশেষ ফজিলত : সুরা বাকারার শেষে ২৮৫ ও ২৮৬ নম্বর আয়াত দুটির বিশেষ ফজিলত রয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.)-এর বর্ণনা, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ এ দুটি আয়াত জান্নাতের ভাণ্ডার থেকে অবতীর্ণ করেছেন। জগৎ সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে পরম দয়ালু আল্লাহ স্বহস্তে তা লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এশার নামাজের পর এ দুটি আয়াত পাঠ করলে তা তাহাজ্জুদ নামাজের স্থলাভিষিক্ত হয়ে যায়।
বায়হাকির রেওয়ায়েতে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহপাক এ দুটি আয়াত দিয়ে সুরা বাকারা সমাপ্ত করেছেন। আরশের নিম্নস্থিত বিশেষ ভাণ্ডার থেকে এ দুটি আয়াত আমাকে দান করা হয়েছে। তোমরা বিশেষভাবে এ দুটি আয়াত শিক্ষা করো এবং নিজেদের স্ত্রীলোক ও সন্তান-সন্ততিকে শিখাও।
এ দুটি আয়াতের আগের আয়াত নিয়ে সাহাবাগণের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। সে আয়াতটি ছিল- ‘তোমাদের অন্তরে যা আছে, প্রকাশ করো কিংবা গোপন করো সর্বাবস্থায় আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নেবেন।
‘ আয়াতের আসল উদ্দেশ্য ছিল, তোমরা স্বেচ্ছায় যা করবে, আল্লাহ তার হিসাব নেবেন। অনিচ্ছাকৃত কুচিন্তা ও ত্রুটি এর অন্তর্ভুক্তই ছিল না। কিন্তু আয়াতের ভাষা বাহ্যত ব্যাপক ছিল। এতে বোঝা যেত, অনিচ্ছাকৃত ধারণারও হিসাব নেওয়া হবে। এ আয়াত শুনে সাহাবাগণ অস্থির হয়ে গেলেন এবং রাসুল (সা.)-এর কাছে আরজ করলেন : ইয়া রাসুলাল্লাহ! এত দিন আমরা মনে করতাম, আমাদের ইচ্ছাকৃত কাজেরই হিসাব হবে। মনে যেসব অনিচ্ছাকৃত কল্পনা আসে, সেগুলোর হিসাব হবে না। কিন্তু এ আয়াতে জানা গেল, প্রতিটি কল্পনারও হিসাব হবে। এতে তো শাস্তির কবল থেকে মুক্তি পাওয়া সাংঘাতিক কঠিন মনে হয়। মহানবী (সা.) আয়াতের সঠিক উদ্দেশ্য জানতেন, কিন্তু আয়াতে ব্যবহৃত শব্দের ব্যাপকতার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলা সমীচীন মনে করলেন না, বরং ওহির অপেক্ষায় রইলেন। তিনি সাহাবাগণকে আপাতত আদেশ দিলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে যে নির্দেশ আসে, তা সহজ হোক কিংবা কঠিন- মুমিনের কাজ তো মেনে নেওয়া। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও দ্বিধা করা উচিত নয়। আল্লাহর প্রতিটি আদেশ শুনে তোমাদের কথা বলা উচিত- ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা আপনার নির্দেশ শুনেছি এবং মেনে নিয়েছি। হে আমাদের প্রভু! যদি নির্দেশ পালনে আমাদের কোনো ত্রুটি হয়ে থাকে, তবে তা ক্ষমা করুন। কেননা, আমাদের আপনারই দিকে ফিরতে হবে।’
সাহাবারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশমতো কাজ করলেন, যদিও তাঁদের মনে এ খটকা ছিল, অনিচ্ছাকৃত কল্পনা ও কুচিন্তা থেকে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহপাক এ দুটি আয়াত নাজিল করেন। প্রথম আয়াতে মুসলমানদের প্রশংসা করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় আয়াতে সাহাবায়ে কিরামের মনে প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে।
উপসংহারে কোরআন মুসলমানদের একটি বিশেষ দোয়া শিক্ষা দিয়েছে। এতে ভুলবশত কোনো কাজ হয়ে গেলে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দায়ী করো না, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি।’ এরপর বলা হয়েছে : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের ওপর ভারী ও কঠিন কাজের বোঝা অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তী লোকদের (বনি ইসরাইলের) ওপর অর্পণ করেছিলে এবং আমাদের ওপর এমন ফরজ কাজ আরোপ করো না, যা সম্পাদনের শক্তি আমাদের নেই।’
বনি ইসরাইলের ওপর আরোপিত ছিল নাপাক বস্ত্র ধৌত করলে পাক হতো না, বরং নাপাক অংশ কেটে ফেলতে হতো কিংবা পুড়ে ফেলতে হতো এবং নিজেকে হত্যা করা ছাড়া তাদের তওবা কবুল হতো না। এ ছাড়া দুনিয়ায় আমাদের ওপর আজাব নাজিল করো না, যেমন বনি ইসরাইলের কুকর্মের জন্য করেছ। এসব দোয়া যে আল্লাহ কবুল করেছেন, তা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে প্রকাশও করেছেন।
সুত্র- তাফসীরে মারেফুল কুরআন
Leave a Reply