শাষকদের জবাবদিহীতা ও রাসুল (সা)

ইন্তিকালের পাঁচদিন পুর্বে রাসুল (সা) একটু সুস্থবোধ করলেন এবং মসজিদে উপস্থিত হয়ে সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, হে মুসলিমগণ! তোমাদের পূর্বে বহু জাতি অতীত হয়েছে। তারা তাদের নবী ও রাসূলদের কবরসমূহ সিজদাহর স্থানে পরিবর্তন করেছিল। তোমরা যেন সেরুপ আমার কবরকে পূজার স্থানে পরিণত কর না। যেহেতু নবী-রাসুলের কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত কারীদের প্রতি আল্লাহর গজব অবতীর্ণ হয়।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমার নিকট যদি কারোও কোনরূপ প্রাপ্য বা অন্য কোন দাবী- দাওয়া থাকে, তবে এখনই তা আদায় করে নাও। আমাকে তোমরা কেউ ঋণী করে রেখো না। অথবা আমার কোন কার্য-বাক্য বা ব্যবহার দ্বারা কেউ কোনরূপ কষ্ট পেয়ে থাকলে আজই তোমরা আমার নিকট থেকে তার প্রতিশোধ নিয়ে নাও।
তাঁর বাক্য শ্রবণ করে সমবেত সাহাবীগণ কাঁদতে কাঁদতে আকুল হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আপানি কখনও আমাদের কাউকে কোনরূপ কষ্ট দেননি।
আপনার কথা শুনে আমরা তা সহ্য করতে পারছিনা। আপনি কেন এ ধরনের কথা বলে আমাদের ব্যাকুল করছেন। সমস্ত সাহাবী যখন এ ধরনের কথা বললেন, তখন সাহবী ওয়াক্কাস (রা.) সম্মুখে অগ্রসর হয়ে বললেন, হে আল্লাহর নবী (সা.)! আপনি কোন এক সময়ে আমার পৃষ্ঠে চাবুকের আঘাত করেছিলেন এখন আপনার ব্যাপারে আমি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি বলুন।
রাসূলুল্লাহ বললেন, ওয়াক্কাস: কোন সংকোচ বা দ্বিধার কিছু নাই। আমি এ দুনিয়া থেকে সকলের সকল দাবী দাওয়া এবং ঋণমুক্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে চাই, কিন্তু জীবনের পিছনের সকল ঘটনা তো আমার স্মরণ নাই, তুমি একটি ঘটনা আমাকে স্মরণ করে দিয়ে আমাকে ঋণমুক্ত করার যে বলিষ্ট সাহসিকতা প্রদর্শন করেছ, এজন্য আমি তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিচ্ছি। পরম বন্ধুর কাজ করেছ তুমি। আমি যদি তোমার পৃষ্ঠে চাবুকের আঘাত করে থাকি, তবে তুমিও আমার পৃষ্ঠে চাবুকের আঘাত করে আমাকে ঋণ মুক্ত করে দাও। এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে চাবুক নিয়ে হাজির হতে বললেন। উপস্থিত সাহাবীবৃন্দ ওয়াক্কাসের এ ব্যাপারটিতে বিস্ময়ে বিচলিত ও হতবাক হয়ে পড়লেন। তারা হায় হায় করে উঠলেন যে, কি করে ওয়াক্কাস এ কঠিন রোগাক্রান্ত রাসূলুল্লাহ (সা) এর পবিত্র দেহে চাবুকের আঘাত করবে। তারা সকলেই ওয়াক্কাসের নিষ্ঠুরতার জন্য তাকে ধিক্কার দিতে লাগলেন এবং বললেন, হে ওয়াক্কাস! তুমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বদলে আমাদের পৃষ্ঠে চাবুকের আঘাত কর।
একথা শুনে সকলেই নিজ নিজ পিঠ পাতিয়া দিতে গেলেন। কিন্তু হযরত রাসূলে করিম (সা.) তাদেরকে নিরন্ত করে বললেন, তা হয় না, হে আমার সহচরগণ। তোমরা যদি আমার হিতাকাঙ্ক্ষী হয়ে থাক, তবে আমার দ্বারাই পরিশোধ করতে দাও। তা তোমরা পরিশোধ করলে তাতে আমি ঋণমুক্ত হব কীভাবে। হযরত আলী (রা.) বেশী বিচলিত হয়েছিলেন। তিনি বললেন, ওয়াক্কাস! তোমাকে যদি হুযুর একটি আঘাত করে থাকেন, তুমি তার বদলে আমার পিঠে দশটি আঘাত কর। রাসূলুল্লাহ (সা.) কে রেহাই দান কর।
কিন্তু রাসূলে করীম (সা.) হযরত আলী (রা.) বললেন, আলী তুমি যদি প্রকৃতই আমাকে ভালবেসে থাক তাহলে এ ব্যাকুলতা দূর করে আমাকে আমার ঋণমুক্ত হতে সুযোগ দান কর। এ কথা বলে তিনি ওয়াক্কাসকে চাবুক নিয়ে অগ্রসর হতে বললেন। সমস্ত সাহবীগণ তখন ক্রন্দন করতে লাগলেন।ওয়াক্কাস চাবুক নিয়ে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি যখন আমার পিঠে চাবুকের আঘাত করেছিলেন তখন তে আমার প্ষ্ঠদেশ অনাবৃত ছিল। আপনার পিঠে যে, পোশাক আবৃত।
তার কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) মৃদু হেসে বললেন, ওয়াক্কাস! তুমি তো ঠিক কথাই বলেছ। কিন্তু আমি তো কখনও কাউকেও আমার উন্মুক্ত পিঠ প্রদর্শন করিনি। কিন্তু আজ দেখছি অবশ্যই আমার পৃষ্ঠদেশ উন্মুক্ত করতে হবে। তবে আস, তুমি আমার কক্ষে আস। আমার গায়ের জামা খুলে দিলেই তারপর তুমি আমার পিঠে চাবুকের আঘাত করবে। তোমার কোন ভয়ের কারণ নাই। আমার সম্মুখে তোমাকে কেহ কিছুই বলতে সাহস পাবে না।
রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় কক্ষে প্রবেশ করে তার গায়ের জামা খুলে দিলেন। ওয়াক্কাস তার হাতের চাবুক দূরে ফেলে দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পৃষ্ঠদেশের উপরিভাগে ঘাড়ের উপরস্থ পবিত্র মোহরে নবুয়তের ওপর চুম্বন দান করে তার পদতলে লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে ক্ষমা প্রার্থনা করে বললেন, ইয়া রাসূলল্লাহ (সা.) আমার জীবনের সাধ মিটেছে, আমার মনের আকাঙ্ক্ষা সফল হয়েছে। আমি শুধু আপানার পৃষ্ঠপরি মোহরে নবুয়তে স্পর্শের সৌভাগ্য অর্জনের জন্যই এই ছলনা করেছিলাম আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) সহাস্যে বললেন, যাও, আল্লাহ তোমার বাসনা সফল করেছেন। তোমার জন্য দোযখের আগুন আজ হারাম হয়ে গেল।
সুত্রঃ আল-কুরাআনের বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও বিশ্লেষণ ।
Leave a Reply