সূরা মুলক : আমল ও ফযীলত

সূরা মুলক কুরআনে কারীমের ঊনত্রিশ নম্বর পারার প্রথম সূরা। সূরার ক্রম অনুসারে এটি কুরআনের সাতষট্টি নম্বর সূরা। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি সূরা এটি। আল্লাহ তাআলার রাজত্ব-কতৃর্ত্ব ও মহত্ত্বের বর্ণনার মাধ্যমে শুরু হয়েছে এ সূরা। আসমান ও গ্রহ-নক্ষত্রের সৃষ্টি-কুশলতা ও নিপুণতা উল্লেখের মাধ্যমে তাঁর কুদরতের কথা আলোচনা করা হয়েছে।

জন্ম-মৃত্যু সৃষ্টির উদ্দেশ্য বর্ণনার মাধ্যমে মানুষের জীবনের লক্ষ্য তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহকে ভয় করে যে বান্দা সিরাতে মুসতাকীমের উপর অটল-অবিচল থাকবে এবং জীবন-পরীক্ষায় কৃতকার্য হবে তার জন্য ঘোষণা করা হয়েছে মহা পুরস্কারের। সাথে সাথে জীবন চলার পথে মানুষ যদি লক্ষচ্যুত হয়; আল্লাহর নাফরমানীর পথ অবলম্বন করে তাহলে তার জন্য কী ভয়াবহ পরিণাম অপেক্ষা করছে তা বিবৃত হয়েছে। আর পথভ্রষ্ট বান্দা তার পরিণাম প্রত্যক্ষ করে আখেরাতে কী ভাষা ও বাক্যে আফসোস-আক্ষেপ করবে তা-ও তুলে ধরা হয়েছে মর্মস্পর্শী উপস্থাপনায়।

স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে দুনিয়াতে আল্লাহর দেয়া সুযোগ ও ছাড়ের কথা। পরিশেষে তাঁর বিভিন্ন নিআমতের কথা উল্লেখ করে মানুষের আল্লাহ-মুখাপেক্ষিতা ও অসহায়ত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে আল্লাহর শোকর আদায় ও আখেরাতের প্রস্তুতির প্রতি। এসব কারণে সূরা মুলক মুমিনের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ এক পাথেয়।

সাথে সাথে সূরা মুলকের অনেক ফযীলতও বর্ণিত হয়েছে হাদীস শরীফে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে এ সূরা তিলাওয়াত করতেন। এমনকি এ সূরা তিলাওয়াত না করে রাতে ঘুমাতে যেতেন না। এ সূরা তার আমলকারীর জন্য সুপারিশ করবে। কবরের আযাব থেকে প্রতিবন্ধক হবে। আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভের মাধ্যম হবে।

এ সূরা আমলকারীর জন্য সুপারিশ করবে

আল্লাহ তাআলার নিজ কালাম যদি তাঁর কাছে কারো মাগফিরাতের জন্য সুপারিশ করে তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ সে সুপারিশ গ্রহণ করবেন এবং বান্দাকে ক্ষমা করবেন। সূরা মুলক এমনই একটি সূরা, যা আমলকারীর জন্য মাগফিরাতের সুপারিশ করবে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنّ سُورَةً مِنَ القُرْآنِ ثَلَاثُونَ آيَةً شَفَعَتْ لِرَجُلٍ حَتّى غُفِرَ لَهُ، وَهِيَ سُورَةُ تَبَارَكَ الّذِي بِيَدِهِ المُلْكُ.

قال الترمذي: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ.

কুরআনে ত্রিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা রয়েছে, যা এক ব্যক্তির জন্য মাগফিরাতের সুপারিশ করেছে ফলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। তা হল, সূরা তাবারাকাল্লাযী… অর্থাৎ সূরা মুল্ক। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৮৯১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪০০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৭৮৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৯৭৫

এ সূরা আমলকারীর পক্ষে ওকালতি করে জান্নাতে প্রবেশ করাবে

কেবল সাধারণ সুপারিশ নয়; বরং এ সূরা তার আমলকারীর পক্ষে ওকালতি করবে। আমলকারীকে জান্নাতে না নেয়া পর্যন্ত তার পক্ষে লড়তে থাকবে। আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

سُورَةٌ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هِيَ إِلّا ثَلَاثُونَ آيَةً، خَاصَمَتْ عَنْ صَاحِبِهَا حَتّى أَدْخَلَتْهُ الْجَنّةَ، وَهِيَ سُورَةُ تَبَارَكَ.

قال الضياء المقدسي في الأحاديث المختارة: إسناده حسن.

وقال الهيثمي في مجمع الزوائد: رَوَاهُ الطّبَرَانِيّ فِي الصّغِيرِ وَالْأَوْسَطِ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصّحِيحِ.

কুরআনে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা রয়েছে, যা তার আমলকারীকে জান্নাতে প্রবেশ করানো পর্যন্ত তার পক্ষে ওকালতি করেছে, তার পক্ষে লড়েছে। তা হল, সূরা তাবারাকা (সূরামুলক)। -আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৩৬৫৪; আলমুজামুস সগীর, তবারানী, হাদীস ৪৯০; আলআহাদীসুল মুখতারাহ, যিয়া আলমাকদীসী, হাদীস ১৭৩৮; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ১১৪৩০

সুতরাং যে ব্যক্তি এ সূরা তিলাওয়াত করবে, এর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করবে আশা করা যায় সে এর সুপারিশ লাভ করবে এবং ক্ষমা ও জান্নাত লাভে ধন্য হবে।

নবীজী রাতে সূরা মুলক তিলাওয়াত না করে ঘুমাতেন না

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে সূরা মুলক তিলাওয়াত করতেন। এমনকি রাতে সূরা মুলক এবং সূরা সাজদাহ তিলাওয়াত না করা পর্যন্ত ঘুমাতেন না।

জাবের রা. বলেন-

كَانَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ لَا يَنَامُ حَتّى يَقْرَأَ بِتَنْزِيلُ السّجْدَةِ، وَبِتَبَارَكَ.

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা সাজদাহ ও সূরা মুলক তিলাওয়াত না করা পর্যন্ত ঘুমাতেন না। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৪০৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩৫৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৪৬৫৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদীস ২৯৮১৬; আলআদাবুল মুফরাদ, বুখারী, হাদীস ১২০৭; সুনানে দারিমী, হাদীস ১০৪০

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দান করুন- আমীন।

 সুত্র- আল কাউসার। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *