আশুরার ফযিলত এবং করণীয় ও বর্জনীয়

হিজরি বর্ষপঞ্জীর প্রথম মাস মহররমের দশম দিনকে ইসলামে ‘আশুরা’ বলা হয়। এই দিনটি মুসলিমদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এ দিনে ইতিহাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল।
আশুরার ফযিলত
আল্লাহর রহমত লাভের দিন: হাদিসে এসেছে, আশুরার দিন আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি অশেষ রহমত বর্ষণ করেন।
গুনাহ মাফের হওয়ার দিন: হজরত আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আশুরার দিনের রোজার দ্বারা আমি আল্লাহর কাছে বিগত বছরের গুনাহ মাফের আশা রাখি।” (মুসলিম)
আযাব থেকে মুক্তির দিন: হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে এই দিন (আশুরার দিন) এবং এই মাস (রমজান মাস) এর রোজার চেয়ে অন্য কোনো রোজাকে এত গুরুত্ব দিতে দেখিনি।” (মিশকাত)
আশুরায় করণীয়
রোজা রাখা: আশুরার দিন রোজা রাখা অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ। হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা আশুরার রোজা রাখ; ইয়াহুদিদের মতো নয়; আশুরার আগে বা পরে আরও একদিন রোজা রাখ।” (মুসনাদে আহমাদ)
দু’আ করা: আশুরার দিন বেশি বেশি দু’আ করা উচিত। কারণ এ দিন আল্লাহর কাছে দু’আ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ইস্তেগফার করা: আশুরার দিন বেশি বেশি ইস্তেগফার করা উচিত। কারণ এ দিন আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন।
সদকা করা: আশুরার দিন সদকা করা অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ।
কুরআন তিলাওয়াত করা: আশুরার দিন কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত।
আশুরায় বর্জনীয়
শোক-সন্তাপ প্রকাশ করা: আশুরার দিন শোক-সন্তাপ প্রকাশ করা ঠিক নয়। কারণ ইসলামে শোক-সন্তাপ প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
মাথা কামানো: আশুরার দিন মাথা কামানো ঠিক নয়। এটি জাহেলিয়্যাতের রীতিনীতি।
নিজেকে কষ্ট দেওয়া: আশুরার দিন নিজেকে কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়। ইসলামে নিজেকে কষ্ট দেওয়া নিষিদ্ধ।
অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অনুকরণ করা: আশুরার দিন অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অনুকরণ করা ঠিক নয়।
মুহাররম কেন্দ্রিক সকল গর্হিত কর্মকা- থেকে বেঁচে থাকার পাশাপাশি সকল বিদআত-খুরাফাত ও রসম-রেওয়াজ থেকেও দূরে থাকা আবশ্যক। দেখা যায়, ফযীলতের সময়গুলোতে সওয়াব হাছিল করতে গিয়ে উল্টো হারামে লিপ্ত হওয়ার গুনাহ হতে থাকে। এটা তো কখনোই কাম্য নয়। আবার বিধানগতভাবে ফযীলতের এ ব্যাপারগুলো নফল হওয়ায় এ থেকে গাফেল থাকাও উচিত নয়। শরীয়ত যে বিধানকে যে স্তরে রেখেছে এবং যে সময়ের যতটুকু মূল্যায়ন করেছে ততটুকু করতে পারাই লাভ। এর কমবেশি করতে গেলেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। তাই একদিকে যেভাবে সকল খুরাফাত ও রসম-রেওয়াজ পরিত্যাজ্য, অপরদিকে ফযীলতপূর্ণ এ আমল ও উপলক্ষগুলো নফল হওয়ায় এগুলোর ব্যাপারে বিলকুল গাফেল থাকাও সচেতন মুমিনের শান নয়। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
বান্দার উপর আমি যে বিধান ফরয করেছি আমার নৈকট্য লাভের জন্য তারচে’ উত্তম কিছু নেই। আর বান্দা (ফরয ইবাদতের পর) নফল আমলের মাধ্যমে আমার নৈকট্যের পথে অগ্রসর হতে থাকে। একপর্যায়ে সে আমার ভালবাসা লাভ করে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৫০২
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ফরয বিধানের ব্যাপারে পূর্ণ সচেতন থাকার পাশাপাশি নফল বিধানাবলির ক্ষেত্রেও মনোযোগী হওয়ার তাওফীক দান করুন।
বিশেষভাবে নতুন বছরে নতুন প্রত্যয় ও পূর্ণ উদ্যমে ঈমান-আমলের পথে এগিয়ে যাবার তাওফীক দান করুন। আমাদের ঈমান-আমল, কর্ম-আচরণ, স্বভাব-চরিত্রসহ জীবনের সকল অঙ্গনে উৎকর্ষ আসুক- এই পণ নিয়ে শুরু হোক আমাদের আগামীর পথচলা। আল্লাহ তাআলা সকলকে সেই তাওফীক দান করুন- আমীন
Leave a Reply