ওয়াদা রক্ষা করা ও অঙ্গীকার পূরণ করা

মুসলিম সমাজে বর্তমান অনেক বড় ইস্যুগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আমানতের খেয়ানত করা। এটা আমাদের অধপতনের অন্যতম কারণ। অনেককে বলতে শুনা যায়, আমি মুসলিমদের বিশ্বাস করার চেয়ে বিধর্মীদের বিশ্বাস করবো। কারণ তারা কমিটমেন্ট রক্ষা করে। সমাজের নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত সবর্ত্রই আমানতের খেয়ানতের বীজ ঢুকে গিয়েছে। মুসলমানদের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো, জবান রক্ষা করা। ওয়াদা রক্ষা করা।  এটাই প্রকৃত মুমিনের  বৈশিষ্ট। ওয়াদা পুরণ নিয়ে কুরআন ও হাদীস কি বলে । 


এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَأَوْفُوا بِالعَهْدِ إِنَّ العَهْدَ كَانَ مَسْئُولًا .
*এবং অঙ্গীকার পূর্ণ করো। নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ [সুরা বনি-ইসরাঈল ১৭: ৩৪]
وَأَوْفُوا بِعَهْدِ اللَّهِ إِذَا عَاهَدْتُمْ.
‘আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর সে অঙ্গীকার পূর্ণ করো।’ [সুরা নাহল ১৬: ৯১]
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ.

হে মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করো।’ [সুরা মায়িদাহ ৫: ১]

يَايَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لَا
تَفْعَلُونَ.
‘হে মুমিনগণ! তোমরা যা করো না, তা কেন বলো? তোমরা যা করো না, তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক।’ [সুরা সাফ ৬১: ২-৩]
وعن أبي هريرة رضي الله عنه: أنَّ رسول الله صلى الله عليه وسلم قَالَ: «آيه المُنَافِقِ ثَلاثُ: إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ».
[৬৮৯] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকের আলামত হলো তিনটি: ১. কথা বলার সময় মিথ্যা কথা বলে। ২. ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। ৩. আমানত রাখলে তার খিয়ানত করে। ৬১২ন্য
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما: أنَّ رسول الله صلى الله عليه وسلم قَالَ: «أَرْبَعُ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النَّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا: إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ، وَإِذَا حَدَّثَ
كَذَبَ، وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ

আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যার মধ্যে এই চারটি চরিত্র থাকবে, সে হলো খাঁটি মুনাফিক। আর যার মধ্যে এগুলোর একটি চরিত্র থাকবে, তার মধ্যে মুনাফেকির চরিত্র রয়ে যাবে, যতক্ষণ না সে তা ছাড়তে পারে: ১. যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, তখন সে খিয়ানত করে। ২. যখন কথা বলে, তখন মিথ্যা কথা বলে। ৩. ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। ৪. ঝগড়া-বিবাদ করলে, গালি দেয়। 

হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, বাহরাইন থেকে কোনো সম্পদ এলে, আমি তোমাকে এই এই পরিমাণ সম্পদ দেবো। কিন্তু বাহরাইন থেকে সম্পদ আসার আগেই নবিজি ইন্তেকাল করেন। অতঃপর বাহরাইন থেকে সম্পদ আসল। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ঘোষণা দিলেন যে, নবিজির কাছে যার প্রাপ্য বা ঋণ ছিল, সে যেন আমার কাছে আসে। এই ঘোষণা শুনে আমি তাঁর (আবু বকরের) কাছে গিয়ে বললাম, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে এই এই সম্পদ দেওয়ার ওয়াদা করেছিলেন। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে তাঁর হাত ভরে সম্পদ দিলেন। আমি গুনে দেখলাম, প্রায় পাঁচশত দিরহাম। এরপরে তিনি আবার আমাকে বললেন, আরও দ্বিগুণ গ্রহণ করো। 

সুতরাং আমরা কারো ওয়াদা ভংগ করবোনা। কাউকে কথা দিলে , তা অবশ্যই রাখবো। যদি কোন কারণে কথা না রাখতে পারি, নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগে তার সাথে যোগাযোগ করে, মধ্যস্থতা করবো, যাতে আমানতদাতার কষ্ট না হয়। 

সুত্র- রিয়াদুস সালিহীন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *