হজ্ব এবং হাজরে আসওয়াদ: ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় তাৎপর্য

হজ্ব এবং হাজরে আসওয়াদ: ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় তাৎপর্য
হজের প্রতিটি অংশে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, তন্মধ্যে অন্যতম হলো হাজরে আসওয়াদ চুম্বন। হাজরে আসওয়াদ, যা কাবা ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ১.১০ মিটার উচ্চতায় স্থাপিত, দৈর্ঘ্যে ২৫ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থে ১৭ সেন্টিমিটার। এই পাথরের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম।
ইসলামি বর্ণনায় উল্লেখ আছে যে, এই পাথরটি জান্নাত থেকে এসেছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর বর্ণনায়, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে এসেছে, যা আগে দুধের মতো সাদা ছিল, কিন্তু মানুষের পাপের কারণে এটি কালো হয়ে গেছে” (তিরমিজি শরীফঃ ৮৭৭)। নবী করিম (সা.) আরও বলেন, “রোকনে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রাহিম জান্নাতের দুই ইয়াকুত পাথর” (তিরমিজি)।
পাথরটির ইতিহাস সুদূরপ্রসারী। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং তার পুত্র ইসমাঈল (আঃ) কাবা নির্মাণকালে এটি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে মহানবী (সাঃ) এর নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে কাবা পুনর্নির্মাণকালে, মক্কার নেতারা এই পাথর স্থাপনের জন্য তার উপর আস্থা রেখেছিলেন। নবী করিম (সাঃ) একটি চাদরে পাথরটি রেখে সবার সহযোগিতায় যথাস্থানে স্থাপন করেন।
হাজরে আসওয়াদ জান্নাতের পাথর হিসেবে পরিচিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহ কেয়ামতের দিন হাজরে আসওয়াদ পাঠাবেন, এর চোখ এবং জিহ্বা থাকবে এবং এটি কথা বলবে এবং সাক্ষ্য দেবে” (তিরমিযী)। হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের গুরুত্ব আল্লাহর প্রতি ভক্তি ও ভালবাসার প্রতীক হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
হজরত উমর (রাঃ) বলেন, “আমি জানি, তুমি একটি পাথর মাত্র, তোমার উপকার বা ক্ষতির ক্ষমতা নেই। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তোমাকে চুম্বন করেছেন বলেই আমি তোমাকে চুম্বন করি” (বুখারী)। এ থেকেই বোঝা যায়, মুসলমানরা পাথরকে কোন ক্ষমতাশালী বস্তু মনে করেন না।
ইতিহাসে এই পাথর চুরি ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯৩০ সালে কারমাতিরা এটি চুরি করে নিয়ে যায় এবং ৮ টুকরোতে বিভক্ত হয়। পরবর্তীতে, এটি রূপার বর্ডারসহ পুনরায় সংযুক্ত করা হয়।
মুসলমানদের জন্য এই পাথর চুম্বন করা একটি সুন্নত। চুম্বনের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়। তবে, যদি সরাসরি চুম্বন করা সম্ভব না হয়, তাহলে ইশারা করেও এই সুন্নত পালন করা যায়।
এই পাথর চুম্বনের মাধ্যমে ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, কালো-সাদা নির্বিশেষে সবাই আল্লাহর প্রতি তাদের ভক্তি প্রকাশ করে। হজের মূল লক্ষ্য বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করা, যা হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়।
Leave a Reply