দ্বীনি বিষয়ে রাগ করার ব্যাপারে ইসলাম যা বলে

وَمَنْ يُعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللَّهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ عِنْدَ رَبِّهِ.
‘আর কেউ আল্লাহর সম্মানযোগ্য বিধানাবলির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে পালনকর্তার নিকট তা তার জন্য (পরিণামের বিচারে) উত্তম।’ [সুরা হাজ্জ ২২:৩০]
إِنْ تَنْصُرُوا اللَّهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ.
‘(হে বিশ্বাসীগণ!) যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের দৃঢ়পদ রাখবেন।’ [সুরা মুহাম্মাদ ৪৭: ৭]

عن أبي مسعود عقبة بن عمرو البدري رضي الله عنه قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النبي صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: إِنِّي لأَتَأَخَّرُ عَن صَلَاةِ الصُّبْحِ مِنْ أَجْلِ فَلَانٍ مِمَّا يُطِيلُ بِنَا فَمَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم غَضِبَ فِي مَوْعِظَةٍ قَطُّ أَشَدَّ مِمَّا غَضِبَ يَوْمَئِذٍ؛ فَقَالَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ مِنْكُمْ مُنَفِّرِينَ، فَأَيُّكُمْ أَمَّ النَّاسَ فَلْيُوجِزْ؛ فَإِنَّ مِنْ وَرَائِهِ الكَبِيرَ وَالصَّغِيرَ وَذَا الحَاجَةِ»

আবু মাসউদ উকবাহ ইবনু আমর বাদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক লোক নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে অভিযোগ দিল, অমুক ব্যক্তি লম্বা সময় ধরে সালাতের ইমামতি করে, তাই আমি ফজরের সালাত থেকে দূরে থাকি। (জামাতে নামাজ পড়ি না।) অতঃপর কোনো এক খুতবাহতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক রাগান্বিত হলেন। সেদিনের মতো আমি আর কোনো খুতবাহতে তাঁকে এমন রাগ করতে দেখিনি। তিনি খুতবাহতে বলছিলেন, হে মানুষ-সকল, তোমাদের কেউ-কেউ মানুষের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, সুতরাং তোমাদের যে ব্যক্তি ইমামতি করে, সে যেন সালাতকে সংক্ষিপ্ত করে। কেননা তার পিছনে বৃদ্ধ, ছোট ও ব্যস্ত ব্যক্তিরা থাকে। ৬৫২

عن عائشة رضي الله عنها، قالت: قَدِمَ رسول الله صلى الله عليه وسلم مِنْ ار نفر، وَقَدْ سَتَرْتُ سَهْوَة لِي بِقِرَامِ فِيهِ تَمَائِي، فَلَمَّا رَآهُ رسول الله صلى الله عليه وسلم هتكَهُ وَتَلَوَّنَ وَجهُهُ، وقال: «يَا عَائِشَةُ، أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ القِيَامَةِ الَّذِينَ يُضَاهُونَ بِخَلْقِ اللَّهِ!»
القبلة
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, কোনো এক সফর থেকে নবিজি বাড়িতে ফিরে এলেন। তখন আমার ঘরে ছবিযুক্ত একটি পর্দা ঝুলানো ছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটা দেখে ছিঁড়ে ফেললেন। তখন তার চেহারা রক্তিম বর্ণের হয়ে গেল। তিনি বললেন, হে আয়িশা, যারা আল্লাহর সৃষ্টিজীবকে চিত্রাঙ্কিত করে, কিয়ামতের দিন তারা আল্লাহর কঠিন আজাবের মধ্যে থাকবে।

عنها: أن قريشًا أَهَمَّهُمْ شَأْنُ المَرأَةِ المخزومِيَّةِ الَّتِي سَرَقَتْ، فَقَالُوا: مَنْ يُكَلِّمُ فيها رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ فقالوا : مَنْ يَجْتَرِئُ عَلَيْهِ إِلَّا أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ حب رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ فَكَلَّمَهُ أُسَامَةُ، فَقَالَ رسول الله صلى الله عليه وسلم: «أَتَشْفَعُ في حَدَّ مِنْ حُدُودِ الله تَعَالَى؟!» ثُمَّ قَامَ فَاخْتَطَبَ، ثُمَّ قَالَ: إِنَّمَا أَهْلَكَ مَنْ قَبْلَكُمْ أَنَّهُمْ كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ، وَإِذَا سَرَقَ فيهِمُ الضَّعِيفُ أَقَامُوا عَلَيْهِ الحَدَّ، وَايْمُ الله، لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعتُ يَدَهَا»
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, মাখজুমি গোত্রের মহিলার চুরির ঘটনায় কুরাইশরা পেরেশান হয়ে গেল। ফলে তারা বলল, এ ব্যাপারে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবি উসামা ইবনু যাইদ ছাড়া আর কেউ নবিজির সাথে কথা বলার দুঃসাহস করতে পারবে না। তাই উসামা রাদিয়াল্লাহু আনহু এ বিষয়ে নবিজির সাথে আলাপ করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর নির্ধারিত হদের (শরয়ি দণ্ডবিধির) ব্যাপারে আমার কাছে তুমি সুপারিশ নিয়ে এসেছ? অতঃপর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাষণ দিতে দাড়ালেন। ভাষণে তিনি বললেন, তোমাদের পুর্বেকার লোকেরা সম্মানি বংশের কেউ চুরি করলে, তাকে ছেড়ে দিত, আর দুর্বলরা চুরি করলে, তাদের ওপর হদ (শরিয়াতের বিধান) কায়িম করত, আর সে কারণে তারা ধ্বংস হয়েছে।
ওয়াল্লাহি! যদি মুহাম্মাদের মেয়ে ফাতিমাও চুরি করত, আমি তার হাতও কর্তন করে দিতাম।

عن أنس رضي الله عنه: أنَّ النبي صلى الله عليه وسلم رأى نُخَامَةً في القبلة، فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَيْهِ حَتَّى رُؤيَ فِي وَجْهِهِ؛ فَقَامَ فَحَكَهُ بِيَدِهِ، فَقَالَ: «إِن أَحَدَكُمْ إِذَا قَامَ فِي صَلَاتِهِ فَإِنَّهُ يُنَاجِي رَبَّهُ، وَإِنَّ رَبَّهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ القِبلْةِ، فَلَا يَبْزُقَنَّ أَحَدُكُمْ قِبَلَ الْقِبْلَةِ، وَلَكِنْ عَنْ يَسَارِهِ، أَوْ تَحْتَ قَدَمِهِ ثُمَّ أَخَذَ طَرَفَ رِدَائِهِ فَبَصَقَ فِيهِ، ثُمَّ رَدَّ بَعْضَهُ عَلَى بَعْضٍ، فَقَالَ: «أَوْ يَفْعَلُ هكذا
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিবলার দিকে শ্লেষ্মা/কফ/থুথু দেখতে পেলেন। এটা দেখে নবিজির খুব খারাপ লাগল। তার চেহারায়ও সেই চিহ্ন ফুটে উঠল। নবিজি দাঁড়িয়ে নিজ হাতে তা ঘষে উঠিয়ে ফেললেন। তারপর বললেন, তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার আল্লাহর সাথে কথোপকথন করে। আর তার ও কিবলার মাঝে তার আল্লাহ থাকেন। সুতরাং তোমাদের কেউ যেন কেবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ না করে। একান্তই যদি থুথু চলে আসে, তাহলে বামে কিংবা পায়ের নিচে ফেলবে। এরপরে নবিজি তার চাদরের এক কোণ ধরে তাতে থুথু ফেলে এক অংশকে অন্য অংশের দ্বারায় রগড়ে দিয়ে বললেন, তোমরা চাইলে এমনও করতে পারো।

সুতরাং দ্বীনি বিষয়ে রাগ করা ততটুকু বৈধ, যতটুকু ইসলাম অনুমতি দেয়। দ্বীনি বিষয় রাগ করার নামে কারো উপর নিজ মতবাদ চাপিয়ে দেয়া বা জোর জবরদস্তিতা বৈধ নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *