কুরআন মাজীদের দৃষ্টিতে সফলতার কথা

সফলতা ও ব্যর্থতা অতি পরিচিত দুটি শব্দ। সবার কাছে এর সংজ্ঞা এক না হলেও দুনিয়ার সবাই সফলতা লাভ করতে চায়। ছোট থেকে ছোট কোনো কাজে সফল হওয়া। বড় থেকে বড় কোনো উদ্দেশ্যে সফল হওয়া। সুচিন্তিত লক্ষ্য অর্জনে সফল হওয়া। জীবনে সফল হওয়া। দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হওয়া। 

এজাতীয় বিভিন্ন ভাগ-বিভাগে মানুষ সফলতাকে ভাগ করে থাকে। এর মাধ্যমে নিজেদের উন্নতি ও অগ্রগতির হিসাব করে। তবে একজন মুমিনের জীবনে প্রকৃত সফলতা সেটাই, যার মাধ্যমে সে দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ তাআলার রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ করে। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জীবন পাড়ি দিয়ে চিরস্থায়ী আখিরাতের জীবনে সুখ ও শান্তি লাভ করে। আল্লাহ তাআলার নায ও নিআমতপূর্ণ জান্নাত লাভ করে। আযাব ও গযবের জাহান্নাম থেকে চিরমুক্তি লাভ করে।

যে কোনো মুসলমান জাগতিক বিষয়াদির প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে ফিকির করলে সফলতার এই সংজ্ঞায় একবাক্যে ঐকমত্য পোষণ করবে। এবং মনে-প্রাণে এই সফলতাকে কামনা করবে।

এই সফলতার কথা কুরআন মাজীদেও এসেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন-

كُلُّ نَفْسٍ ذَآىِٕقَةُ الْمَوْتِ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوْنَ اُجُوْرَكُمْ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَ مَا الْحَیٰوةُ الدُّنْیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ.

প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে এবং তোমাদের সকলকে কিয়ামতের দিন (তোমাদের কর্মের) পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে। তখন যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম। আর এই পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছু নয়। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৮৫

হযরত সাহল ইবনে সা‘দ রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

لَمَوْضِعُ سَوط أحَدكم فِي الْجَنّةِ خَيْرٌ مِنَ الدّنْيَا وَمَا فِيهَا.

قَالَ: ثُمّ تَلَا هَذِهِ الْآيَةَ: فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ.

তোমাদের কারও চাবুক (-এর দৈর্ঘ্য প্রস্থ) পরিমাণ জান্নাতের জায়গা, দুনিয়া ও দুনিয়ায় অবস্থিত সকল বস্তু অপেক্ষা উত্তম।

হযরত সাহল রা. বলেন, একথা বলার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নি¤েœাক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করেন-

فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ.

যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম। -তাফসীরে ইবনে কাসীর, ২/১৭৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ৩০১৩; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৭৪১৭; 

মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩১৭০

কুরআন মাজীদে আরও ইরশাদ হয়েছে-

مَنْ یُّصْرَفْ عَنْهُ یَوْمَىِٕذٍ فَقَدْ رَحِمَهٗ وَ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْمُبِیْنُ.

সেদিন (কিয়ামতের দিন) যে ব্যক্তি থেকেই তা (জাহান্নামের শাস্তি) দূর করে দেওয়া হবে তার প্রতি আল্লাহ বড়ই দয়া করলেন। আর সেটাই স্পষ্ট সফলতা। -সূরা আনআম (৬) : ১৬

যে সফলতা কুরআন মাজীদের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত, যে সফলতা হাদীসে নববীর বক্তব্য দ্বারা সাব্যস্ত এবং বিবেকবান প্রত্যেক মুসলমানের চিন্তা ও ভাবনায় যা সুপ্রতিষ্ঠিত, সেই সফলতার প্রতি প্রত্যেকেরই আগ্রহ থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। সেই সফলতা একজন মুমিনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। অতএব এর জন্য যে কোনো ধরনের ত্যাগ ও সাধনাকে গ্রহণ করা উচিত। এর জন্য জীবন-প্রাণ বিলিয়ে কাজ করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *