সন্তনের শৈশবেই ঈমানের বীজ বপন করুন।

সন্তনের শৈশবেই ঈমানের বীজ বপন করুন।

শিশুর দ্বীনী মানসিকতা গঠনে মায়ের শিক্ষা ও তরবিয়তের তুলনা হয় না। শৈশব হল ভিত্তিস্থাপন ও বীজ বপনের বয়স।

এ বয়সে মায়েরাই পারেন সন্তানের উর্বর হৃদয়ে এমন বীজ বপন করতে, যা আল্লাহ চাহে তো বিশাল, মজবুত ও ফলদায়ক বৃক্ষে পরিণত হতে পারে। সালাফের যুগে শিশুরা মায়ের সুশীতল পাঠশালা থেকেই পেতো ঈমান-তাওহীদের প্রাথমিক ধারণা।

শিখত তাকওয়া, উত্তম আদাব-আখলাক ও ফরজে আইন ইলম। মায়ের কোল থেকেই সন্তানরা পেত ঈমানী চেতনা ও মর্যাদাবোধ, গুনাহ ও অন্যায়ের প্রতি ঘৃণার দীক্ষা। শৈশব থেকেই মায়েরা সন্তানকে ইবাদতে অভ্যস্ত করে তুলতেন।

হযরত উম্মে সুলাইম রা. যখন ইসলামের আলোয় আলোকিত হন, তখন তাঁর স্বামী মালিক বিন নাদর সফরে। মালিক ছিলেন মুশরিক। সফর থেকে ফেরার পর তিনি উম্মে সুলাইম রা.কে ধমক দিয়ে বললেন, তুমি ধর্মত্যাগী হয়ে গেছ?

উম্মে সুলাইম রা. উত্তর দিলেন, ‘আমি ধর্মত্যাগী হইনি, বরং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর ঈমান এনেছি।’

তাদের সংসারে আনাস নামক এক দুধের শিশু ছিল, যার সবে মুখ ফুটেছে। উম্মে সুলাইম রা. তাঁর এ সন্তানকেও আলোকিত করে গড়ে তোলার প্রত্যয় গ্রহণ করলেন। তাই এ বয়সেই তাকে শেখাতেন, বাবা, বলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। বলো, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ।

শিশুটিও আধোআধোভাবে বলত। এভাবে উম্মে সুলাইম রা. তাঁর শিশু আনাসের অস্তিত্বে ঈমানের আভা ছড়াতেন। তার মুশরিক পিতা এসব দেখে রাগান্বিত হয়ে বলত, আমার ছেলেকে নষ্ট করছ কেন?

উম্মে সুলাইম রা. উত্তর দিতেন, আমি তাকে নষ্ট করছি না।

কিছুদিন পরেই মালিক মৃত্যুবরণ করলে উম্মে সুলাইম রা. এ শিশুর তরবিয়ত ও খেদমতের জন্য নিজেকে ওয়াক্ফ করার ওয়াদা করেন। বলেন—

لاَ جَرَمَ لاَ أَفْطِمُ أَنَسًا حَتَّى يَدَعَ الثَّدْيَ حَيًّا وَلاَ أَتَزَوَّجُ حَتَّى يَأْمُرَنِي أَنَسٌ. وفي رواية: حَتَّى يَبْلُغَ أَنَسٌ وَيَجْلِسَ فِي الْمَجَالِسِ.

আমি ওয়াদা করলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত আনাস বেঁচে থেকে নিজেই দুধ না ছাড়বে, ততক্ষণ তার দুধ ছাড়াব না। আনাস বড় হয়ে যদি নিজেই আমাকে বিয়ে বসতে না বলে আমি বিয়েও বসব না।

উম্মে সুলাইম রা. ছিলেন বানূ নাজ্জার গোত্রের সম্ভ্রান্ত নারী। তাই দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তাব সহজেই পেতেন। কিন্তু এ সন্তানের জন্য তিনি ত্যাগ স্বীকারের সংকল্প করেন। মায়ের এ ত্যাগের কথা হযরত আনাস রা. স্মরণ করে বলতেন—

جَزَى اللهُ أُمِّي عَنِّي خَيْرًا لَقَدْ أَحْسَنَتْ وِلاَيَتِي.

আল্লাহ আমার মাকে উত্তম প্রতিদান দিন, তিনি আমার কত সুন্দর প্রতিপালন করেছেন।

তাবাকাতে ইবনে সা’দ ১০ : ৩৯৬

-মাওলানা হুযাইফা বিন জাফর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *