আপনার অবশ্যই জানা উচিৎ

বাকপটুতা, কৌশলী যুক্তি-তর্ক এবং মিথ্যাসাক্ষী, ক্ষমতার প্রভাব বা অন্য কোনো কারণে প্রভাবিত হয়ে বিচারক অন্যের হক যদি আমাকে দিয়েও দেয়, বা আমার পক্ষে ভুল রায় এসে যায়, শরীয়তের দৃষ্টিতে এই রায় আমার জন্য গ্রহণ করা হালাল ও বৈধ নয়; সেটি হারাম বলেই বিবেচিত।
কারণ মিথ্যা মিথ্যাই। অন্যায় অন্যায়ই। বিচারিক ফয়সালার মাধ্যমে মিথ্যা সত্য হয় না, অন্যায় ন্যায় হয়ে যায় না!
আল্লামা ইবনে কাসীর রাহ. চমৎকার একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। হযরত উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন—
আমি একজন মানুষ। আর তোমরা আমার নিকট বিভিন্ন বিবাদের ফায়সালার জন্য আস। হতে পারে, তোমাদের কেউ অপর থেকে অধিক বাকপটু ও প্রমাণ উপস্থাপনে বেশি পারঙ্গম। তাই হতে পারে, আমি তার কথা শুনে সে অনুযায়ী ফয়সালা করে দিলাম।
অতএব, এভাবে যদি আমি কারো জন্য তার ভাইয়ের কোনো হক দিয়ে দেই, সে যেন তা গ্রহণ না করে। কারণ আমি (তার অন্যায্য দাবি ও বাকপটুতার ভিত্তিতে) তাকে যা দেই, সেটা (পরিণতির বিচারে) আগুনের একটি টুকরো।
—সহীহ বুখারী, হাদীস ৭১৬৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭১৩
হাদীসের প্রেক্ষাপট ছিল—
একবার দুই আনসারী ব্যক্তি রাসূলুল্লাহর খেদমতে এলেন এবং একটি বেওয়ারিশ ও পরিত্যক্ত জমি প্রত্যেকে নিজের বলে দাবি করলেন। নিছক দাবি ছাড়া কারো কাছেই কোনো দলীল নেই। তখন নবুওতী যবান থেকে উৎসারিত হল উপরোক্ত হাদীসখানা। (দ্র. মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৩৪২৮; শরহু সুনানি আবী দাউদ, ইবনে রাসলান ১৪/৬৩২)
আল্লামা ইবনে কাসীর রাহ. আয়াতের তাফসীরে উপরোক্ত হাদীস উপস্থাপন করার পর বললেন—
এই আয়াত ও হাদীস নির্দেশ করে, বিচারকের বিচার কোনো বিষয়কে মূল থেকে পরিবর্তন করতে পারে না। কাজেই (বিচারকের বিচার) আদতে কোনো হারামকে প্রকৃতভাবে হালাল করতে পারে না এবং কোনো হালালকেও হারাম করতে পারে না। বরং সেটি কার্যকর হয় কেবল বাহ্যিকভাবে। এই বাহ্যিকতা যদি বাস্তবতার সাথে মিলে যায়, তবে তো সোনায় সোহাগা। অন্যথায় বিচারক (তার সাধ্যমাফিক ন্যায় বিচারের কারণে) পুরস্কার পাবে, কিন্তু নিজের পক্ষে কৌশলে রায় আদায়কারীর জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
-মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম
Leave a Reply