সর্বপ্রথম অভিশপ্ত কে?

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
لَّعَنَهُ اللهُ وَ قَالَ لَاَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِیْبًا مَّفْرُوْضًا.
যার প্রতি আল্লাহ লানত করেছেন। আর সে (আল্লাহকে) বলেছিল, আমি তোমার বান্দাদের মধ্য হতে নির্ধারিত এক অংশকে নিয়ে নেব। -সূরা নিসা (৪) : ১১৮
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
وَّ اِنَّ عَلَیْكَ اللَّعْنَةَ اِلٰی یَوْمِ الدِّیْنِ.
কিয়ামতকাল পর্যন্ত তোমার উপর অভিশাপ পড়তে থাকবে। -সূরা হিজর (১৫) : ৩৫
ইবলিস অভিশপ্ত হওয়ার কারণ হল, সে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক হযরত আদম আ.-কে সিজদা করার আদেশ লঙ্ঘন করেছিল। সে অহংকার বশত আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছিল। সে হযরত আদম আ. থেকে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করেছিল। আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করে তওবা করেনি; বরং আল্লাহর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এসব কারণে সে অভিশপ্ত হয়েছিল। কুরআন মাজীদে বিভিন্ন সূরায় তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
সূরা বাকারার ৩৪ নং আয়াত, সূরা আ‘রাফের ১১ নং আয়াত, সূরা হিজরের ৩১নং আয়াত, সূরা ইসরার ৬১ নং আয়াত, সূরা কাহফের ৫০ নং আয়াত, সূরা ত্বহার ২০ নং আয়াত ও সূরা ছদের ৭৪ নং আয়াতসমূহে এ বিষয়ক বর্ণনা এসেছে। সব জায়গার সারকথা এই যে, আল্লাহ তাআলা হযরত আদম আ.-কে সৃষ্টি করার পর জিনদের সরদার ইবলীস ও ফিরিশতা সকলকে আদেশ করলেন যে তোমরা আদমকে সিজদা কর। ফিরিশতারা সকলে তাঁকে সিজদা করল। কিন্তু ইবলিস সিজদা করল না; বরং উল্টো যুক্তি-তর্ক শুরু করল। অহংকার প্রদর্শন করল। আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল। সূরা ইসরাতে আল্লাহর সঙ্গে ইবলীসের যে কথোপকথন এসেছে সেটা নিচে তুলে ধরা হল-
وَ اِذْ قُلْنَا لِلْمَلٰٓىِٕكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْۤا اِلَّاۤ اِبْلِیْسَ قَالَ ءَاَسْجُدُ لِمَنْ خَلَقْتَ طِیْنًا قَالَ اَرَءَیْتَكَ هٰذَا الَّذِیْ كَرَّمْتَ عَلَیَّ ؗ لَىِٕنْ اَخَّرْتَنِ اِلٰی یَوْمِ الْقِیٰمَةِ لَاَحْتَنِكَنَّ ذُرِّیَّتَهٗۤ اِلَّا قَلِیْلًا، قَالَ اذْهَبْ فَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ فَاِنَّ جَهَنَّمَ جَزَآؤُكُمْ جَزَآءً مَّوْفُوْرًا،وَ اسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ وَ اَجْلِبْ عَلَیْهِمْ بِخَیْلِكَ وَ رَجِلِكَ وَ شَارِكْهُمْ فِی الْاَمْوَالِ وَ الْاَوْلَادِ وَعِدْهُمْ وَ مَا یَعِدُهُمُ الشَّیْطٰنُ اِلَّا غُرُوْرًا، اِنَّ عِبَادِیْ لَیْسَ لَكَ عَلَیْهِمْ سُلْطٰنٌ وَ كَفٰی بِرَبِّكَ وَكِیْلًا.
এবং সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন আমি ফিরিশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমকে সিজদা কর। তখন তারা সিজদা করল, কিন্তু ইবলীস করল না। সে বলল, আমি কি তাকে সিজদা করব, যাকে আপনি মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন? সে বলতে লাগল, বলুন তো, এই কি সেই সৃষ্টি, যাকে আপনি আমার উপর মর্যাদা দান করেছেন! আপনি যদি কিয়ামতের দিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দেন, তবে আমি তার বংশধরদের মধ্যে অল্পসংখ্যক ছাড়া বাকি সকলের চোয়ালে লাগাম পরিয়ে দেব।
আল্লাহ বললেন, যাও, তাদের মধ্যে যে কেউ তোমার অনুগামী হবে, জাহান্নামই হবে তোমাদের সকলের শাস্তি- পরিপূর্ণ শাস্তি। তাদের মধ্যে যার উপর তোমার ক্ষমতা চলে নিজ আহ্বানের দ্বারা বিভ্রান্ত কর, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদের উপর চড়াও হও, তাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে অংশীদার হয়ে যাও এবং তাদেরকে যত পার প্রতিশ্রুতি দাও। বস্তুত শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়। নিশ্চয়ই আমার যারা বান্দা, তাদের উপর তোমার কোনো ক্ষমতা চলবে না। তোমার রক্ষকরূপে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট। -সূরা ইসরা (১৭) : ৬৫
Leave a Reply