খলিফা উমর বিন আবদুল আজিজ রহ.

খলিফা উমর বাড়িতে ঢুকবেন, এমন সময় এক লোক গণিমতের মাল নিয়ে আসেন। মালের সাথে প্রচুর আপেল ছিলো। তিনি আপেলগুলো জনসাধারণের মাঝে ভাগ করে দিতে থাকেন।
খলিফার ছোট ছেলে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল। আপেল দেখে তার জিভ টসটস করতে থাকে।সে এগিয়ে যায় গণিমতের মালের দিকে। একবার আব্বার দিকে, আরেকবার গণিমতের মালের দিকে তাঁকায় সে। এ রকম কয়েকবার তাকাবার পর স টুক করে একটি আপেল হাতে নিয়ে মুখে পুরে দেয়।
খলিফা তখনি ছেলের মুখ থেকে আপেলটি কেড়ে নেন। ছেলে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির ভেতর চলে যায়। মায়ের কাছে গিয়ে সব বলে। মায়ের চোখ ছলছল হয়ে যায়। বাজার থেকে আপেল আনিয়ে ছেলেকে দেন। তারপর ছোট্ট ছেলের কান্না থামে।
খলিফা উমর বিন আবদুল আজিজ আপেল বিতরণের পর ঘরে আসেন। ছেলের হাতে আপেল দেখে কিছুটা অবাক হন। স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন—
: গণিমতের মাল তুমি পেয়েছ, না?
: জ্বি, না।
: তবে যে ছেলের হাতে আপেল?
: বাজার থেকে আনিয়ে দিয়েছি।
উমর বিন আবদুল আজিজ কান্না ভেজা স্বরে বলেন—
: জানো, ওর মুখ থেকে যখন আপেল ছিনিয়ে আনি, তখন আমার মনে হচ্ছিল— আমি যেন আমার কলজে টেনে বের করছি। কিন্তু এ না করে উপায় ছিলো না, না করলে জনসাধারণের হক আত্মসাৎ করা হতো।
আবার, এক রাতে এক বার্তাবাহক অনেক দূর থেকে খলিফা উমর বিন আবদুল আজিজ এর কাছে আসেন। ঘরে তখন মোমবাতি জ্বলছে।
বার্তাবাহক দেশের ব্যাপার নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। আলোচনা শেষ করে তিনি জিজ্ঞেস করেন—
:আমিরুল মুমিনিন। আপনার ছেলেমেয়ে কেমন আছে? আপনার স্বাস্থ্য এখন কেমন? আপনার ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্য ভালো তো?
হযরত উমর তখন মোমবাতিটি নিভিয়ে দেন। অন্য একটি মোমবাতি জ্বালান। তারপর তিনি তার নিজের, পরিবারের ও অন্য সবার কথা বলা শুরু করেন।
বার্তাবাহক অবাক হয়েছিলেন মোমবাতিটি নিভিয়ে দেয়ায়। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে খলিফা হেসে বলেন—
: আগের মোমবাতিটি জনসাধারণের। তাই সেটা জনসাধারণের কাজেই ব্যবহার করা চলে। কিন্তু যখন আমি আমার ব্যক্তিগত আলাপ শুরু করলাম, তখন তো আর সেটা ব্যবহার করা চলে না। কারণ আগের সেই মোমবাতিটি আমার নয়।
Leave a Reply