সালাতুত তাসবিহ নামাযের নিয়ম

চার রাকাত নামায।প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর,যে কোন সূরা পড়তে পারেন।তবে এই নামাযে বিশেষত্ব এই যে, প্রতি রাকাতে ৭৫ বার করে,চার রাকাতে মোট (৭৫৪=৩০০) বার তাসবীহ পড়তে হবে।
১ম নিয়ম
━━━━━━━━━━━
তাসবীহ কিভাবে পরব?
سُبْحاَنَ الله وَالْحَمدُ للهِ وَلآَ اِلَهَ اِلاَّاللهُ وَاللهُ اَكْبرُ
উচ্ছারন: সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
●১. ১ম রাকাত এ সানা পড়ার পরে তাসবীহ টি ১৫ বার পড়তে হবে
●২. তারপর স্বাভাবিক নিয়মে সুরা ফাতিহা ও অন্য আরেকটি সুরা অথবা অন্তত তিন আয়াত পড়ার পরে তাসবীহ টি ১০ বার পড়তে হবে।
●৩. এরপর রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবীহ পরার পরে তাসবীহ টি ১০ বার পড়তে হবে
●৪. এরপর রুকু হতে দাড়িয়ে গিয়ে “রাব্বানা লাকাল হামদ” পড়ার পরে তাসবীহ টি ১০ বার পড়তে হবে ।
●৫. এরপর সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পরে তাসবীহ টি ১০ বার পড়তে হবে ।
●৬. প্রথম সিজদা থেকে বসে তাসবীহ টি ১০ বার পড়তে হবে ।
●৭. এরপর আবার সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পরে তাসবীহ টি ১০ বার পড়তে হবে ।
●৮. তারপর একই ভাবে ২য় রাকাত পড়তে হবে, (সুরা ফাতিহা পড়ার আগে তাসবীহ টি ১৫ বার পড়তে হবে।)
●৯. অতপর ২য়রাকাত এর ২য় সিজদার পর “আত্তহিয়্যাতু…”, দরুদ আর দোয়া পড়ার পরে সালাম না ফিরিয়ে,২য় রাকাত এর মতো ৩য় এবং ৪থ রাকাত একই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। (তাসবীহ টি ১৫ বার পড়ে স্বাভাবিক নিয়মে সুরা ফাতিহা ও অন্য আরেকটি সুরা পড়তে হবে)।
❏কোন এক স্থানে উক্ত তাসবীহ পড়তে সম্পূর্ণ ভুলে গেলে বা ভুলে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম পড়লে পরবর্তী যে রুকনেই স্মরণ আসুক সেখানে তথাকার সংখ্যার সাথে এই ভুলে যাওয়া সংখ্যাগুলোও আদায় করে নিতে হবে। আর এই নামাযে কোন কারণে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হলে সেই সিজদায়ে সাহুর সিজদা এবং তার মধ্যকার বৈঠকে উক্ত তাসবীহ পাঠ করতে হবে না। তাসবীহের সংখ্যা স্মরণ রাখার জন্য আঙ্গুলের কর গণনা করা যাবে না,তবে আঙ্গুল চেপে স্মরণ রাখা যেতে পারে।
❏আর কেহ যদি উপরোক্ত তাসবীহ বা কলেমার পরে “ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিউল আজিম” এই কালিমা যোগ করে তা অতি উত্তম । হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
[সূত্রঃ- এহইয়াউ উলুমুদ্দীন]
ইবনুল মুবারক ও অন্য কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সালাতুত তাসবীহ ও তার ফাযীলাত প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছেন।
আবু ওয়াহব বলেন, আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারককে সালাতুত তাসবীহ প্রসঙ্গে আমি প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহু আকবার বলবে, অতঃপর “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহ গাইরুকা” পাঠ করবে।
অতঃপর পনের বার “সুবহানাল্লাহি ওয়াল-হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার” পাঠ করবে। অতঃপর আউযু বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ এবং সূরা ফাতিহা ও তার সাথে অন্য সূরা পাঠ করবে। অতঃপর দশবার সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার” পাঠ করবে। অতঃপর রুকূতে গিয়ে দশবার, রুকু হতে মাথা তুলে দশবার, সাজদাহয় গিয়ে দশবার, সাজদাহ হতে মাথা তুলে দশবার এবং দ্বিতীয় সাজদাহয় দশবার উক্ত দু’আ পাঠ করবে। এভাবে চার রাকাআত নামায আদায় করবে। এতে প্রতি রাকাআতে পঁচাত্তর বার পাঠ করা হবে। প্রতি রাকাআতের প্রথমে এ দু’আ পনের বার পাঠ করবে, অতঃপর দশবার করে উক্ত দু’আ পাঠ করবে। যদি এ নামায রাতের বেলা আদায় করা হয় তবে আমি প্রতি দুই রাকাআত পর পর সালাম ফিরানো ভাল মনে করি। আর যদি দিনের বেলা আদায় করে তবে চাইলে দুই রাকাআত পর পর বা চার রাকাআত পরও সালাম ফিরাতে পারে।
আবু ওয়াহব বলেন, ‘আবদুল আযীয আমাকে জানিয়েছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারাক বলেছেন, রুকু সাজদায় পরযায়ক্রমে তিনবার করে সুবহানা রব্বিয়াল আযীম’ ও ‘সুবহানা রব্বিয়াল আলা’ পাঠ করার পর উল্লেখিত দু’আ পাঠ করবে। আবদুল আযীয বলেন, আমি ইবনুল মুবারককে প্রশ্ন করলাম, যদি এ নামাযে ভুল হয়ে যায় তবে ভুলের সাজদাহতে উক্ত দু’আ পাঠ করতে হবে? তিনি বললেন, না, এ দু’আ তো মোট তিনশো বার পাঠ করতে হবে। -সহীহ। তা’লীকুর রাগীব- (১/২৩৯)
বিঃ দ্রঃ সালাতুত তাসবীহ পড়ার আরো একটি নিয়ম রয়েছে। তবে উপরোল্লিখিত নিয়মটি উত্তম।
দ্বিতীয় নিয়ম
━━━━━━━━━━━
ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) প্রখ্যাত তাবে-তাবেয়ী আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারাক (رحمة الله)-(ইন্তেকাল:১৮১ হি:) থেকে “সালাতুত তাসবীহ” আদায়ের আরেকটি নিয়ম উল্লেখ করেছেন।আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারক (رحمة الله) এর মতে এ অতিরিক্ত যিকর আদায়ের নিয়ম হলো:
●১. নামায শুরু করে শুরুর দোয়া বা সানা পাঠের পরে তাসবিহ ১৫ বার।
●২. সূরা ফাতেহা ও অন্য কোনো সূরা শেষ করার পরে এ তাসবিহ ১০ বার।
●৩. রুকুর তসবিহ পাঠ করার পর ১০ বার এ তাসবিহ।
●৪. রুকু থেকে রাব্বানা লাকাল হামদ বলে উঠে ১০ বার এ তাসবিহ।
●৫. প্রথম সিজদায় “সুবহানা রাব্বি আল আ’লা” ৩ বার পড়ে এ তসবিহ ১০ বার।
●৬. দুই সিজদার মাঝে ১০ বার এ তাসবিহ ও দ্বিতীয় সিজদায় আবার ১০ বার। মোট ৭৫ বার প্রতি রাক’আতে।
অর্থাৎ, এই নিয়মে কিরাআতের পূর্বে ও পরে দাঁড়ানো অবস্থায় ২৫ বার তাসবীহ পাঠ করা হয় আর দ্বিতীয় সিজদার পরে বসা অবস্থায় কোনো তাসবীহ পড়া হয় না।পূর্বের হাদীসে বর্ণিত নিয়মে কিরাআ’তের পূর্বে কোনো তাসবীহ নেই। দাঁড়ানো অবস্থায় শুধু কিরাআতের পরে ১৫ বার তাসবীহ পড়তে হবে। প্রত্যেক রাক’আতে দ্বিতীয় সিজদার পরে বসে ১০ বার তাসবীহ পড়তে হবে।
[মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে বুজ দান করুন।আমিন।]
Leave a Reply