যবানের হেফাযতের গুরুত্ব

যবান অনেক দামী নিআমত, আল্লাহ তাআলার মহা দান। তাই এর নিয়ন্ত্রণ ও যথাযথ ব্যবহার কাম্য। কথায় আছে, দামী জিনিসের হেফাযত কঠিন। স্বর্ণ-রৌপ্য তো মানুষ যত্রতত্র ফেলে রাখে না। সাধ্যের সবটুকু দিয়ে হেফাযতের চেষ্টা করে। আল্লাহ তাআলা যবান হেফাযতের তাকীদ করেছেন এভাবে-
مَا یَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ اِلَّا لَدَیْهِ رَقِیْبٌ عَتِیْدٌ.
মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত আছে, যে (লেখার জন্য) সদা প্রস্তুত। -সূরা ক্বফ (৫০) : ১৮
যবানে উচ্চারিত সবকিছুই ফেরেশতারা সংরক্ষণ করে রাখেন। ভালো-মন্দ, ছোট-বড় সবকিছুই তাঁরা লিপিবদ্ধ করেন। কিয়ামতের দিন এগুলোর হিসাব দিতে হবে। সেইদিন জিহ্বা, হাত-পাসহ সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও সাক্ষী দিবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
یَّوْمَ تَشْهَدُ عَلَیْهِمْ اَلْسِنَتُهُمْ وَ اَیْدِیْهِمْ وَ اَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ .
যেদিন তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত ও পা সাক্ষ্য দেবে। -সূরা নূর (২৪) : ২৪
আল্লাহ তাআলা বিভিন্নভাবে বান্দাকে সতর্ক করেছেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَ قُوْلُوْا قَوْلًا سَدِیْدًا، یُّصْلِحْ لَكُمْ اَعْمَالَكُمْ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَ مَنْ یُّطِعِ اللهَ وَ رَسُوْلَهٗ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِیْمًا.
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য-সঠিক কথা বল। তাহলে আল্লাহ তোমাদের কার্যাবলী শুধরে দেবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করল সে মহা সাফল্য অর্জন করল। -সূরা আহযাব (৩৩) : ৭০
আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে তাকওয়া অবলম্বন তথা সব ধরনের নাফরমানী ছেড়ে দিতে বলেছেন। এর সাথে সাথেই যবানের সদ্ব্যবহার তথা সত্য-সঠিক কথা বলতে বলেছেন। কেননা, যবান হল নাফরমানীর বড় হাতিয়ার। তাই তাকওয়ার সাথেই যবানে সত্য-সঠিক কথা বলতে বলেছেন। যবান ঠিক হয়ে গেলে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও সংশোধন হয়ে যাবে। তাই এরপরেই সব আমল সংশোধন ও গুনাহ মাফের ঘোষণা দিয়েছেন।
আর অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত, যারা যবানের হেফাযত করতে পারে, তারা অন্যান্য গুনাহ থেকে সহজেই বাঁচতে পারে। যবানের ব্যাপারে শিথিলতা অনেক বড় বড় বিপদ ডেকে আনে। দেখা যায়, দু-একটি কথার সূত্র ধরে বউ-শাশুড়ি কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বড় ধরনের ঝগড়া-বিবাদ হয়ে যায়।
যবান হেফাযতের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন-
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ.
যে আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০১৮
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবী ওকবা ইবনে আমের রা.-কে তিনটি ওসিয়ত করলেন। এর প্রথমটি ছিল-
امْلِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ.
তুমি তোমার জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখ। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪০৬
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-
وَالّذِي لَا إِلَهَ غَيْرُهُ مَا عَلَى الْأَرْضِ شَيْءٌ أَحْوَجُ إِلَى طُولِ سَجْنٍ مِنْ لِسَانٍ.
অর্থাৎ, সেই সত্তার কসম, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। ভূপৃষ্ঠে সবকিছুর চেয়ে জিহ্বাই সবচেয়ে বেশি বন্দিত্ব ও নিয়ন্ত্রণের মুখাপেক্ষী। -আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, বর্ণনা ৮৭৪৪; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, বর্ণনা ১৮১৮৪
Leave a Reply