শবে বরাতে বর্জনীয়

শবেবরাত এবং হালুয়া
শবেবরাত ফযীলতের রাত। এ রাতে যত সম্ভব ইবাদত করবে। এ রাতে হালুয়া-রুটি পাকানোর যে অহেতুক রসম চালু হয়েছে, এর সাথে শবেবরাতের কোনো সম্পর্ক নেই।
আসলে শয়তান সবখানেই ভাগ বসাতে চায়। সে ভাবল, এ রাতে মুসলমানদেরকে ক্ষমা করা হয়। যেমন, এক বর্ণনায় এসেছে, এ রাতে ‘কাল্ব’ গোত্রের বকরী পালের পশম পরিমাণ মানুষের গুনাহ মাফ করা হয়। শয়তান চিন্তা করল, এত মানুষের গুনাহ মাফ করা হলে তো আমি হেরে গেলাম।
তাই সে নিজের ভাগ বসাল। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করল, শবেবরাত আসলে হালুয়া-রুটি তৈরি কর। নামায পড় বা না পড়, ইবাদত কর বা না কর শবেবরাতে হালুয়া-রুটি অবশ্যই পাকাতে হবে। না পাকাইলে ভৎষণা করা হয়- অমুকের ঘরে শবেবরাতেরও হালুয়া-রুটি পাক হয় না। সে তো সাংঘাতিক কৃপন।
এমনিতে সারা বছর কোনো দিন হালুয়া পাকানো নাজায়েয নয়। যার মন চায় সে পাকিয়ে খেতে পারে। কিন্তু শবেবরাতের সাথে এর সম্পর্ক কী? কুরআন, সুন্নাহ, আছারে সাহাবা, তাবেয়ী ও বুজুর্গানে দীনের আমলে এর কোনো আলোচনা পাওয়া যায় না। এটা শয়তানের পাতা ফাঁদ। মানুষকে পাক-সাক ও খাওয়াতে লাগিয়ে দিছে। হালুয়া-রুটি পাকানোর যে গুরুত্ব ইবাদতেরও সে গুরুত্ব নেই।
বেদআতের বৈশিষ্ট্য
একটি বিষয় সব সময় মনে রাখবেন। আমার আব্বাজান মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ. বলতেন, বেদআতের বৈশিষ্ট্য হলো, মানুষ যখন বেদআতে লিপ্ত হয় তখন আসল সুন্নতের তাওফীক কমে যায়। দেখবেন, শবেবরাতের যারা দীর্ঘ সময় সালাতুততাসবীহ জামাতের সাথে পড়ে, তাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাযের জামাতে কম দেখা যায়। যারা বেদআত তথা হালুয়া-রুটি তৈরিতে ব্যস্ত থাকে তাদের নামায কাযা হয়ে যায়, জামাত ছুটে যায়। অথচ তার কোনো চিন্তা নেই।
কারো ইন্তেকাল হয়ে গেলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল গুরুত্বারোপ করেছেন, জলদি শরীয়ত মোতাবেক তার মিরাছ বন্টন করতে। এখন হচ্ছে উল্টো। মিরাছ বন্টনের কোনো খেয়াল নেই। তৃতীয় দিনের, দশম দিনের অনুষ্ঠান, চল্লিশা এবং মৃত্যুবাষিকী ঠিকই পালন হচ্ছে।
বেদআতের বৈশিষ্ট্য হলো, যখন মানুষ তাতে লিপ্ত হয় সুন্নত তার থেকে দূরে সরে যায়। সুন্নতের উপর আমল করার তাওফীক হয় না। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করেন। মোটকথা, এসব অহেতুক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। কিন্তু এ রাত ফযীলতের রাত। যারা বলেন, এ রাতের কোনো ফযীলত নেই তাদের ধারণা ঠিক নয়।
আতশবাজি
দ্বিতীয় বিষয়টি প্রথমটি থেকে আরো খারাপ। সেটি হলো শবেবরাতে আতশবাজির প্রচল শুরু হয়েছে।
এভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এই আতশবাজির মাধ্যমে অনেক সময় বহু নিষ্পাপ জান ধ্বংশ হয়ে যায়। করাচীর মৌলভী বাজার আজো সাক্ষী হয়ে আছে। কোনো এক শবেবরাতের আতশবাজির ধ্বংশলীলার সাক্ষী হয়ে আছে। গোটা বাজার পুরে ধ্বংশ হয়ে গেছে। হালুয়া-রুটি পাকানো তো সাধারন দিনে জায়িয।
কিন্তু এভাবে আতশবাজি করা যাতে টাকার অপচয় হয়, মানুষের জান-মালের ক্ষতির আশংকা থাকে তা তো সাধারন দিনেও জায়িয নেই। বরং হারাম। তো এই মোবারক রাত যাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা করা হয় এ ধরনের অহেতুক গুনাহর কাজ পরিহার করা চাই।
Leave a Reply