মেজবানের অধিকার

মেহমানের অধিকার এবং মেহমানের প্রতি মেজবানের দায়িত্ব ও শিষ্টাচার নিয়ে কথা বললে স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে মেহমানের দায়িত্ব ও মেজবানের অধিকারের কথা।
ইসলামের এ এক অনন্য সৌন্দর্য-মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের যাবতীয় দিক নিয়েই নির্দেশনা রয়েছে তাতে।
কখনো কখনো মেহমানের কারণে মেজবানের অনেক সমস্যা হয়ে যায় যা মেহমান হয়তো বুঝতেই পারেন না।
চলুন আজ এর একটি বিষয় নিয়ে কথা বলি।
১। মেহমান মেজবানের কাজকর্ম আটকে দেয়।
কখনো কখনো মেহমান মেজবানের কাজকর্ম আটকে দেয়। এতেও তার কষ্ট হয়। অনেক সময় তো তাকে বিপদেই পড়ে যেতে হয়।
নবীজীবনের একটি ঘটনা। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মুল মুমিনীন হযরত যায়নাব রা.-কে বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর ওলিমার আয়োজন করেছেন। সেখানে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতে এসে কেউ কেউ গল্পগুজবে মেতে ওঠে। খাওয়া-দাওয়া শেষেও তারা অনেকক্ষণ বসে থাকে। এ প্রেক্ষিতে নাযিল হয় পবিত্র কুরআনের এ আয়াত-
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবী-গৃহে প্রবেশ করো না, তবে যদি তোমাদের খাওয়ার জন্যে (আসার) অনুমতি দেওয়া হয় (তাহলে প্রবেশ করতে পারবে,) তবে এভাবে আসবে যে, তোমরা খাবার প্রস্তুত হওয়ার অপেক্ষায় থাকবে না। যখন তোমাদের আমন্ত্রণ করা হয় তখন তোমরা প্রবেশ করো। অতপর যখন খেয়ে নেবে, তখন চলে যাবে এবং পরস্পর গল্পগুজবে মেতে ওঠবে না। তোমাদের এ আচরণ নবীকে কষ্ট দেয়। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে তা বলতে লজ্জাবোধ করেন। তবে আল্লাহ সত্য প্রকাশে লজ্জা করেন না। আর যখন তোমরা নবীপত্নীদের নিকট কোনো কিছু চাও তখন পর্দার আড়াল থেকে চাও। এ খুবই পরিচ্ছন্ন পন্থা- তোমাদের অন্তর ও তাদের অন্তরের জন্যে। -সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩
আয়াতটি নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট এবং আয়াতের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য আমাদেরকে স্পষ্টই এ নির্দেশনা দিচ্ছে- দাওয়াত গ্রহণ করতে গিয়ে খাবার খাওয়া শেষে এমনভাবে পরস্পরে কথাবার্তায় লিপ্ত হওয়া যাবে না, যাতে মেজবান কষ্ট পেতে পারে।
একইভাবে একজন মেহমানকে এমন প্রতিটি কাজ ও আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে, যাতে তার মেজবানের কোনোরূপ কষ্ট হতে পারে কিংবা তাকে বিব্রত করে তুলতে পারে।
আয়াতের শুরুতেও বলা হচ্ছে একই কথা- তোমাদেরকে যদি দাওয়াত দেয়া না হয় তাহলে যাবে না। আবার দাওয়াত দেয়া হলেও এমন সময় গিয়ে ওঠবে না, যাতে তোমার উপস্থিতির কারণে বাড়ির লোকদের কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে।
আয়াতে যদিও কথাগুলো হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘর সম্পর্কে বলা হয়েছে, কিন্তু এর শিক্ষা সকলের জন্যেই ব্যাপক। আতিথেয়তা ও নিমন্ত্রণ কীভাবে গ্রহণ করা হয়- সেই আদব ও শিষ্টাচারই এখানে সকলকে শেখানো হচ্ছে।
Leave a Reply