কখনো মিথ্যা বলো না

হযরত শায়েখ আবদুল কাদের জিলানী রাহ.
যখন বাগদাদের উদ্দেশে রওয়ানা করলেন তখন বাগদাদ কেবল মুসলিম সাম্রাজ্যের রাজধানীই ছিল না; বরং ইলম ও হিকমত এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, তালীম ও তরবিয়ত এবং দ্বীনী শিক্ষা ও দীক্ষা এবং মুসলিম সভ্যতা-সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র ছিল বাগদাদ। সেখানে তখন অবস্থান করতেন বড় বড় পীর-বুযুর্গ ও মুরশিদ-মুরব্বী। শিক্ষার জন্য তাতে যেই ব্যবস্থাপনা ছিল অন্য কোথাও সে আয়োজন ছিল না। তো দ্বীনী তালীম ও তরবিয়ত হাছিল করার জন্য হযরত শায়েখ আবদুল কাদের জিলানী রওয়ানা হয়েছেন বাগদাদের উদ্দেশে। ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায়, শিশু আবদুল কাদের যখন সফরে রওয়ানা হবেন তখন মা একটি নসীহত করলেন। বললেন, বাবা! তোমাকে একটি নসীহত করছি, মনে রেখো- কখনো মিথ্যা বলো না, কেমন!
মা নসীহত করে ছেলেকে আল্লাহর হাওয়ালা করে দিলেন। ছেলে চলছে কাফেলার সাথে। তখন তো আর এখনকার মতো সফর ছিল না। মানুষ কাফেলাবদ্ধ হয়ে সফর করত। দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হত। ডাকাতদল পথ আগলে ধরত। হত্যা-লুণ্ঠন করত।
এ কাফেলার সাথেও তাই ঘটল। ডাকাতদল যাত্রা রোধ করল। তারা কাফেলার সবাইকে এক এক করে জিজ্ঞাসা করছিল, তোমার কাছে কী কী আছে। সবাই বলছিল, আমার কাছে কিছুই নেই। আমি রিক্ত, আমি শূন্য। তারপর তারা সবকিছু ঘেঁটেঘুঁটে অনেক মূল্যবান মূল্যবান আসবাব পত্র এবং টাকা পয়সা বের করে আনছিল। সেগুলো তারা সব লুটে নিচ্ছিল এবং তাদেরকে মারপিট করছিল।
এভাবে তাদের লুটতরাজ চলছিল। একেক করে জিজ্ঞাসা করে আসতে আসতে এবার পালা এল আবদুল কাদেরের। তারা জিজ্ঞাসা করল তোমার কাছে কী আছে? তিনি বললেন, আমার কাছে কিছু স্বর্ণমুদ্রা আছে। মা আমাকে সেগুলো সেলাই করে দিয়েছেন। ইতিহাস বলে- কেবল এই একটি কথা! এই কথার প্রভাবে ডাকাতরা সবাই তওবা করে ভালো মানুষে পরিণত হল।
এই একটি বালক। সে চাইলে সবার মতোই উত্তর করতে পারত। বলতে পারত, আমার কাছে কিছু নেই। বাহ্যিক বেশভূষাতেও বুঝবার উপায় ছিল না, বেচারার কাছে কিছু থাকবে। কোনো বিত্তশালী অভিজাত পরিবারের কোনো দুলাল বলেও মনে হচ্ছিল না তাকে। কিন্তু না, সে মায়ের উপদেশ মনে রেখেছে। অকপটে সত্য বলে দিয়েছে। ফলে ডাকাতদল ডাকাতি কী করবে! জীবন বদলে রত হয়ে গেছে। কাফেলার সম্পদ তাদের ফেরত দিয়েছে। নিজেদের রোযগারের অসাধু পথ পরিহার করেছে এবং তওবা করে ঈমানী পথ অবলম্বন করেছে। এটা ইতিহাসের একটি ঘটনা।
Leave a Reply