এক বিষাক্ত তীর

সমাজে চলতে গেলে কতজনের সঙ্গে কতভাবে দেখা হয়! কাউকে ভালো আনন্দময় পরিবেশে দেখা যায়, কারও দেখা মেলে চরম সংকটে হাবুডুবুরত। আবার দিনের পরিবর্তনে মানুষের অবস্থাও পরিবর্তন হয়।
এরপর মন্দ অবস্থায় যখন আমরা কাউকে দেখি, তখন অনেকাংশেই খুব দ্রুত আমরা মন্তব্য করে বসি অমুক ‘পাপের’ ফল সে ভোগ করছে!
আবার যখন সামাজিক মর্যাদা ও সম্মানের চূড়ায় অধিষ্ঠিত কারও সম্পর্কে কোনো কথা কেউ চালিয়ে দেয়, সেটাও আমরা নির্দ্বিধায় মেনে নিই।
এরপর চলতে থাকে এর সঙ্গে কল্পনার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় আরও মিথ্যা জুড়ে দিয়ে সমাজে ছড়িয়ে দেয়া। কল্পনার এ চিত্র যার সামনেই প্রকাশ করা হয়, তারও একটাই প্রশ্ন তিনিও এমন করতে পারলেন!
অথচ কেউ একবার যাচাই করার চিন্তাও করল না যা শুনলাম তা সঠিক কি না। সমাজের মানুষের প্রতি এভাবে খেঁড়া অজুহাতে কুধারণা পোষণ করা মানুষের এক স্বভাবজাত বিষয়। স্বভাবের এ কলঙ্ককে জয় করে পারস্পরিক হৃদ্যতাপূর্ণ শান্তিময় সমাজ গড়ে তোলার জন্যে তাই পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اجْتَنِبُوْا كَثِیْرًا مِّنَ الظَّنِّ اِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ اِثْمٌ .
হে মুমিনেরা! তোমরা অনেক রকম ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। নিশ্চয়ই কিছু ধারণা গোনাহের কাজ। সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১২
ধারণামাত্রই গোনাহের কাজ নয়।
বরং জীবনে চলতে গেলে, কী দুনিয়া, কী শরীয়ত, সর্বক্ষেত্রেই আমাদের এ ধারণার ভিত্তিতে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
কোথাও কোথাও অকাট্য প্রমাণ থাকে, সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকে। সেখানে তো আর কোনো কথা চলে না। কিন্তু যেখানে চলতে হয় দুর্বল প্রমাণ দিয়ে, অস্পষ্ট নির্দেশনাকে সামনে রেখে, সেখানে সিদ্ধান্ত নিতে হয় প্রবল ধারণার ভিত্তিতেই। এসব ধারণায় কোনো পাপ নেই।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে চাইলে এ ধারণার ভিত্তিতেই কেউ বাহনে চড়ে এতে করে সে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। এ বিষয়ে তার ধারণা প্রবল, তবে ভবিষ্যতের কথা নিশ্চিত করে বলার সাধ্য নেই কারও। জীবনে চলার ক্ষেত্রে এ ধারণা সঙ্গে করেই আমাদের চলতে হয়। পবিত্র কুরআনের বর্ণনায়ও এ বাস্তবতা ফুটে উঠছে। তাই বলা হচ্ছে কিছু ধারণা পাপ, সব ধারণা নয়।
তবে উপরোক্ত আয়াতের শিক্ষা মোতাবেক যে ধারণা থেকে আমাদেরকে অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে তা হচ্ছে অন্য কারও সম্পর্কে প্রমাণ ও ভিত্তিহীন কোনো মন্দ ধারণা। সহজ ভাষায় একে বলা যায় ‘তোহমত’ বা অপবাদ। এর প্রথম ধাপ কারও প্রতি নিজের অন্তরে কোনো মন্দ ধারণাকে স্থির করে নেয়া, দ্বিতীয় ধাপ সে ধারণার ভিত্তিটি বিষয়টি অন্যদের কাছে ছড়িয়ে দেয়া।
অহেতুক এ মন্দ ধারণা সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে
إِيّاكُمْ وَالظّنّ، فَإِنّ الظّنّ أَكْذَبُ الحَدِيثِ.
তোমরা মন্দ ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা মন্দ ধারণাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় মিথ্যা। সহীহ বুখারী, হাদীস ৫১৪৩
Leave a Reply