বড়দের বড় কাজ

হযরত মাওলানা মুফতী শফী রাহ. বলেন-
তখন হিন্দুস্তানে থাকতাম। একদিন ফজর নামাযের জন্য মসজিদে যাচ্ছিলাম। আমাদের ঘর থেকে মসজিদের পথে একটি কুয়া ছিল। এক বৃদ্ধা মহিলাকে দেখলাম, কুয়া থেকে পানি নিয়ে কলস ভরছে। বৃদ্ধা আমাদের ঘরের কাছাকাছিই থাকত। কলসটা অনেক ভারি। মহিলাও বৃদ্ধা হওয়ার কারণে কিছুদূর যাওয়ার পর মাটিতে পড়ে গেল। আমি ততক্ষণে সেখানে পৌঁছে গেলাম। তার কলসটা তুলে দিতে চাইলাম। মা আমি তুলে দিচ্ছি। কিন্তু উঠানোর সময় মনে হল, কেমন কথা, কলসটা উঠিয়ে আবার বৃদ্ধার মাথায়ই তুলে দেব! তাই নিজের মাথায় নিয়ে বৃদ্ধাকে বললাম, মা আপনার ঘর কোন্ দিকে বলুন। আমি পৌঁছে দিচ্ছি। তিনি রাস্তা বলে দিলেন, আমি কলস মাথায় নিয়ে পথ চলতে শুরু করলাম।
ঘরের কাছে পৌঁছে বললাম, মা আপনি ঘরে গিয়ে পর্দা ঠিক করুন, আমি ভেতরে নিয়ে রেখে দিচ্ছি। তিনি ভেতরে গিয়ে পর্দা ঠিক করে বললেন, বেটা, এখানে রেখে দাও। আমি নির্দেশিত জায়গায় রেখে দিলাম। বের হওয়ার আগেই বৃদ্ধা আমাকে হৃদয়ের গভীর থেকে আন্তরিকভাবে দুআ দিতে লাগলেন। আমার নামাযের তাড়া ছিল, তাই তাড়াতাড়ি চলে গেলাম। তবে দূর থেকেও তার দুআ শুনতে পাচ্ছিলাম।
আমার মনে হল, এটা অনেক সহজ সওদা। কাজ অল্প, কিন্তু প্রাপ্তি অনেক। সিদ্ধান্ত নিলাম, প্রতিদিন এই কাজ করব।
পরদিন আগে আগে ঘর থেকে বের হলাম। তিনি তখন কুয়া থেকে পানি ভরছিলেন। আমি বললাম, মা দেন, আমি পানি ভরে দেই।
আমি বালতি দিয়ে কুয়া থেকে পানি উঠিয়ে কলসটা ভরলাম এবং তার ঘরে পৌঁছে দিলাম।
এই কাজ করে আমার এত নূর অনূভুত হল, আমি নিয়মিত আগে আগে বের হতে লাগলাম। যেন তাকে কুয়া থেকে পানিও তুলতে না হয়। আল্লাহ রাব্বুল ইয্যতের দয়া ও অনুগ্রহে এটা আমার নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়ায়। যতদিন এই বৃদ্ধা জীবিত ছিলেন আর আমি দেওবন্দে ছিলাম, সফরে বা অসুস্থ না থাকলে নিয়মিত বহুদিন পর্যন্ত এই কাজ করেছি। এই ঘটনা এতদিন আল্লাহ তাআলা, সেই বৃদ্ধা আর আমি ব্যতীত কেউ জানত না। আজ তোমাদের উপকারার্থে বললাম।’ (দ্র. হায়াতে মুফতী আ‘যম, পৃষ্ঠা ৫২)
Leave a Reply