মা-বাবার প্রতি কেমন ছিলেন তাঁরা?

মা-বাবার প্রতি কেমন ছিলেন তাঁরা?

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. ইয়েমেনের এক লোককে দেখলেন, মাকে কাঁধে বহন করতে। মাকে কাঁধে নিয়ে তাওয়াফ করতে করতে বলছিল-

إِنِّي لَهَا بَعِيرُهَا الْمُذَلَّلْ

إِنْ أُذْعِرَتْ رِكَابُهَا لَمْ أُذْعَرْ

الله رَبِّي ذُوالْجَلَالِ الأكْبَر

حَمَلْتُهَا أَكْثَرَ مِمَّا حَمَلَتْني

فَهَلْ تُرَى جَازَيْتُهَا يَا ابْنَ عُمَرْ؟

আমি মাকে বহন করা অনুগত উট।

তাঁর উট আতঙ্কিত হলেও আমি আতঙ্কিত হই না।

আল্লাহ আমার রব, মহা পরাক্রমের অধিকারী।

মা আমাকে যতদিন গর্ভে ধারণ করেছেন তার চেয়েও বেশি আমি তাঁকে বহন করেছি।

হে ইবনে উমর, তোমার কী মনে হয়, আমি তাঁর প্রতিদান দিতে পেরেছি?

তিনি বললেন, না, জন্মের সময় তার একটি দীর্ঘশ্বাসের প্রতিদানও দিতে পারনি। -আলআদাবুল মুফরাদ, পৃষ্ঠা ১৮

আমাদের পূর্বসূরিগণ মা-বাবার প্রতি সদাচারের অনন্য উপমা পেশ করেছেন। মা-বাবার অনুগ্রহের সামনে নিজেদের সদাচারকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছেন। মদীনায় হাজারো খেজুর গাছ ছিল। উসামা ইবনে যায়েদ রা. নির্দিষ্ট একটি খেজুর গাছের মজ্জা কেটে আনলেন। কেউ এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার মা এটা আমার কাছে চেয়েছেন। আমার সাধ্যের মধ্যে মা যা চান আমি করে দিই। -মাকারিমুল আখলাক, পৃষ্ঠা ৫৫

আবু হুরায়রা রা. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দরজায় দাঁড়িয়ে মাকে বলতেন, মা আপনার উপর শান্তি ও রহমত নাযিল হোক।

মা বলতেন, তোমার উপরও শান্তি, রহমত ও বরকত নাযিল হোক।

তিনি বলতেন, আল্লাহ আপনাকে রহম করুন যেমন আপনি আমাকে রহম করে ছোট বেলায় লালন-পালন করেছেন।

মা বলতেন, তোমার প্রতিও আল্লাহ রহম করুন যেমন তুমি আমার সঙ্গে বৃদ্ধ বয়সে সদাচার করছ। -আলআদাবুল মুফরাদ, পৃষ্ঠা ১৮

সাঈদ ইবনে সুফিয়ান সাউরী রাহ. বলেন, আমি বাবার সঙ্গে কখনো খারাপ ব্যবহার করিনি। আমি নফল নামায পড়া অবস্থায় আমাকে ডাকলে আমি নামায ছেড়ে দিই। -মাকারিমুল আখলাক, ইবনু আবিদ দুনয়া, পৃষ্ঠা ৬৪

উমর ইবনে যার রাহ.-এর ছেলে মারা গেলে কেউ তাঁকে জিজ্ঞেস করল, সে কেমন সদাচারী ছিল?

তিনি বললেন, দিনের বেলা পথ চললে সে আমার পেছনে থাকত। রাতের বেলা পথ চললে সে সামনে থাকত। আমি নিচে থাকলে কখনো সে ছাদে উঠত না। -আলবির ওয়াসসিলা, ইবনুল জাওযী ১/৮৯

এসব নজীর আমাদের পূর্বসূরিরা স্থাপন করে থাকলেও সময়ের আবর্তনে কিছু উত্তরসূরি আছে, যারা মা-বাবার অবাধ্যতার নিকৃষ্ট ও জঘন্য নজির স্থাপন করেছে। মা-বাবাকে ত্যাগ করার মাধ্যমে অথবা তাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশের মাধ্যমে, কিংবা বন্ধু-বান্ধব ও স্ত্রীকে তাঁদের উপর প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে। মা-বাবাকে ছেড়ে গেলে, তাঁদেরকে বোঝা মনে করলে কী-ইবা বলার আছে। যার পরিণামে তাঁদেরকে হাসপাতাল ও বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে আসে। কখনো কখনো আদালত ও পুলিশ মা-বাবার প্রতি বেদনাদায়ক অবহেলা নিয়ে শোরগোল করে। আল্লাহ সবাইকে এ থেকে রক্ষা করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *