লোক দেখানো দানের অপকারিতা.

দানে যাদের ইখলাস ও নিষ্ঠা থাকে না, রিয়া ও লোকদেখানো মানসিকতা যাদের দানকে গ্রাস করে নেয়, দান করে যারা সুনাম-সুখ্যাতি হাসিল করতে চায়, পবিত্র কুরআনে তাদের জন্যে বর্ণিত হয়েছে একটি হৃদয়স্পর্শী উপমা।
এক লোক সারা জীবনের শ্রম-সাধনায় গড়ে তুলেছে একটি চোখজুড়ানো বাগান। যৌবনের সবটুকু সাধ্য বিলিয়ে দিয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলা সে বাগানে কী নেই! সবরকম ফলের যেন সমাহার সেখানে। আছে সারি সারি খেজুর গাছ। আছে আঙুরের বাগান। এ দুটোই বলা যায়, আরবের শ্রেষ্ঠতম ফল। বাগানটির পাশ দিয়ে কুলকুল করে বয়ে গেছে নদী।
একদিকে নানারকম ফলে সমৃদ্ধ এ ছায়াঘেরা বাগান, এর সঙ্গে জুড়ে আছে নদী। তাই বাগানের ফলফলাদি দেখে যেমন চোখ জুড়ায়, শরীর জুড়িয়ে যায় নদীর তীরের স্নিগ্ধ বাতাসে। এমন একটি বাগান যার থাকে, এ দুনিয়াতে তার আর কী চাই! নিজের জীবন তো কেটে যাবেই, স্বাচ্ছন্দে কেটে যাবে সন্তানের জীবনও।
তার সন্তান এখনো কাজের বয়সে পৌঁছেনি। কিন্তু তাতে কী! এই এক বাগানই তো যথেষ্ট।
এদিকে বাগানের মালিকেরও যৌবন ফুরিয়ে এসেছে। বার্ধক্যের আঘাতে সে আক্রান্ত। কাজের শক্তি নেই শরীরে। সন্তানও অল্পবয়স্ক। সারা জীবনের শ্রম দিয়ে গড়ে তোলা বাগানটিই এ বৃদ্ধবয়সে একমাত্র ভরসা।
এমন একটি বাগান এমন সময়ে এসে এক অগ্নিক্ষরা ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। জীবনধারণের একমাত্র অবলম্বনটি এভাবে চোখের পলকে হারিয়ে গেল। এ আঘাত যদি যৌবনে আসত, তবে নতুন করে সে স্বপ্ন বুনতে পারত। এক বাগানের পরিবর্তে আরও তিনটি বাগান গড়তে পারত। কিন্তু বার্ধক্যের হানায় তো তার স্বপ্ন দেখার শক্তিটুকুও নেই।
এমন অসহায়ত্বের মুহূর্তে লোকটির সারা জীবনের উপার্জন যেমন কোনোই কাজে আসছে না, তেমনি যারা অন্যদের দেখানোর জন্যে দান করে, এ দানও তাদের কোনোই উপকার করবে না। পরকালের কঠিন সময়ে যখন তারা নেকি খুঁজে বেড়াবে, দুনিয়ার জীবনে উদার হস্তে বিলানো কাড়ি কাড়ি দানের বিনিময়ে কোনো নেকিই তখন তাদের ভাগ্যে জুটবে না। [দ্র. সূরা বাকারা (২) : ২৬৬]
এই হচ্ছে লক্ষ্যভ্রষ্ট দানের ভয়াবহতা। চরম সংকটের মুহূর্তে এ দান কোনোই কাজে আসবে না।
Leave a Reply