যার জন্য সত্তর হাজার ফিরিশতা ইসতিগফার করতে থাকে

যার জন্য সত্তর হাজার ফিরিশতা ইসতিগফার করতে থাকে

রুগি দেখতে যাওয়া, রুগির সেবা-শুশ্রষা করা- এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের হক।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ছয়টি হক রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, কী সেই হকগুলো? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ، وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ، وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللهَ فَسَمِّتْهُ، وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتّبِعْهُ.

যখন তার সাথে দেখা হবে সালাম দেবে। দাওয়াত করলে দাওয়াত কবুল করবে। তোমার কাছে উপদেশ-পরামর্শ চাইলে কল্যাণকামিতার সাথে উপদেশ-পরামর্শ দেবে। হাঁচির পর আলহামদু লিল্লাহ বললে এর জবাব দেবে (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে)। যখন অসুস্থ হবে তাকে দেখতে যাবে, শুশ্রষা করবে। মৃত্যুবরণ করলে জানাযা-দাফনে শরীক হবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৬২

আর এটি অনেক বড় ফযীলতের আমলও বটে। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর রহমত লাভ করে। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ عَادَ مَرِيضًا، لَمْ يَزَلْ يَخُوضُ فِي الرَّحْمَةِ حَتَّى يَجْلِسَ، فَإِذَا جَلَسَ اغْتَمَسَ فِيهَا.

ব্যক্তি যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায় সে আল্লাহর রহমতের মাঝে প্রবেশ করে। আর যখন (তার পাশে) বসে তখন সে রহমতের মাঝে ডুব দেয়। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ১০৮৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৪২৬০

আর সবচেয়ে বড় ফযীলত হল, এর দ্বারা গোনাহ মাফ হওয়ার আশা করা যায়। সত্তর হাজার ফিরিশতা তার জন্য ইসতিগফার করতে থাকে। হাসান ইবনে আলী রা. অসুস্থ হলে আবু মূসা আশআরী রা. একবার তাঁকে দেখতে গেলেন। তখন আলী রা. বললেন, আপনি কি বেড়ানোর উদ্দেশে এসেছেন, নাকি রুগি দেখতে এসেছেন? তখন তিনি উত্তরে বললেন, বরং রোগি দেখতে এসেছি। তখন আলী রা. বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-

مَنْ عَادَ مَرِيضًا بَكَرًا شَيّعَهُ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ، كُلّهُمْ يَسْتَغْفِرُ لَهُ حَتّى يُمْسِيَ، وَكَانَ لَهُ خَرِيفٌ فِي الْجَنّةِ، وَإِنْ عَادَهُ مَسَاءً شَيّعَهُ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ كُلّهُمْ يَسْتَغْفِرُ لَهُ، حَتّى يُصْبِحَ وَكَانَ لَهُ خَرِيفٌ فِي الْجَنّةِ.

কেউ যদি সকালে কোনো অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নিতে যায় তার সাথে সত্তর হাজার ফিরিশতা সঙ্গ দেয় এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ইসতিগফার করতে থাকে এবং জান্নাতে তার একটি বাগান লাভ হয়। আর যদি সন্ধ্যায় রুগি দেখতে যায় তাহলে সত্তর হাজার ফিরিশতা তার সঙ্গ দেয় এবং সকাল পর্যন্ত তার জন্য ইসতিগফার করতে থাকে। আর জান্নাতে সে একটি বাগানের অধিকারী হয়।

-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৭৫; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ৬৫৮৫; জামে তিরমিযী, হাদীস ৯৬৯; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১২৬৪ (মাওকূফ হিসেবে) সুনানে আবু দাউদ, বর্ণনা ৩০৯৮; মুসনাদে আহমাদ, বর্ণনা ৯৭৬

এতক্ষণ আমরা ঐসকল বর্ণনা নিয়ে আলোচনা করেছি, যেখানে স্পষ্ট শব্দে -যেমন, اللهُمّ اغْفِرْ لَهُ- ফিরিশতাদের ক্ষমা প্রার্থনার কথা উল্লেখ আছে। এপর্যায়ে ঐসকল বর্ণনা আলোচনা করব, যেখানে ‘সালাত’ শব্দে ফিরিশতাদের ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি এসেছে। কারণ, বান্দার প্রতি ফিরিশতাদের ‘সালাত’ অর্থ দুআ ও ইসতিগফার উভয়টিই হয়। (জামিউ বায়ানিল ইলম, ১৮৩ নং হাদীসের অধীনে; তরহুত তাছরীব ফী শরহিত তাকরীব ২/৩৬৭; তাফসীরে কুরতুবী, সূরা আহযাব ৪৩ নং আয়াতের অধীনে) কোনো কোনো বর্ণনায় ফিরিশতাদের ‘সালাত’-এর ভাষা-ই হল ইসতিগফার। যেমন-

إِنّ الْعَبْدَ إِذَا جَلَسَ فِي مُصَلاهُ بَعْدَ الصّلاةِ، صَلّتْ عَلَيْهِ الْمَلائِكَةُ، وَصَلاتُهُمْ عَلَيْهِ: اللهُمّ اغْفِرْ لَهُ اللهُمّ ارْحَمْهُ .

(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২১৯; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ২৭০০) মোটকথা, ফিরিশতাদের সালাত অর্থ, দুআ-ইসতিগফার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *