এক নামাযের পর আরেক নামাযের অপেক্ষায় মসজিদে অবস্থান করলে…

এক নামাযের পর আরেক নামাযের ইনতিযারে মসজিদে অবস্থান করা অনেক বড় ফযীলতের বিষয়। এটি আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দনীয় আমল; এমন পছন্দনীয় যে, আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাদের সাথে তাঁর ঐ বান্দাদের বিষয়ে গর্ব করেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করলাম। নামাযের পর যারা বাড়িতে ফেরার ফিরে গেল, কিন্তু কিছু মানুষ এশার নামাযের ইনতিযারে মসজিদেই থেকে গেল। এরই মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাঁপাতে হাঁপাতে কাপড় গুটিয়ে দ্রুত তাশরীফ আনলেন। বললেন-
أَبْشِرُوا، هَذَا رَبّكُمْ قَدْ فَتَحَ بَابًا مِنْ أَبْوَابِ السَّمَاءِ، يُبَاهِي بِكُمُ الْمَلَائِكَةَ، يَقُولُ: انْظُرُوا إِلَى عِبَادِي قَدْ قَضَوْا فَرِيضَةً، وَهُمْ يَنْتَظِرُونَ أُخْرَى.
তোমরা (যারা আরেক নামাযের ইনতিযারে মসজিদে অবস্থান করছ তারা) সুসংবাদ গ্রহণ কর। তোমাদের রব আসমানের বিশেষ এক দরজা উন্মুক্ত করেছেন। তিনি তোমাদের নিয়ে তাঁর ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করে বলছেন, তোমরা দেখ আমার বান্দাদের! তারা এক ফরয (নামায) আদায়ের পর আরেক ফরয (নামায) আদায়ের ইনতিযারে রয়েছে। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৮০১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৭৫০
আরেক হাদীসে একে ‘রিবাত’ বলা হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أَلَا أَدُلّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا، وَيَرْفَعُ بِهِ الدّرَجَاتِ؟ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ، وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصّلَاةِ بَعْدَ الصّلَاةِ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ.
আমি কি তোমাদের ঐসমস্ত আমলের কথা বলে দিব, যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা পাপসমূহ মিটিয়ে দেন এবং মর্যাদা সমুন্নত করেন? সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, অবশ্যই বলে দিন আল্লাহর রাসূল! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কষ্টের মুহূর্তে পূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদে বেশি বেশি গমন করা এবং এক নামাযের পর আরেক নামাযের অপেক্ষা করা। (অর্থাৎ, আরেক নামাযের অপেক্ষায় মসজিদে অবস্থান করা।) এটিই হল ‘রিবাত’। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫১; জামে তিরমিযী, হাদীস ৫১
রিবাত হল, শত্রুর সাথে জিহাদে এবং জিহাদের প্রস্তুতিতে নিজেকে আবদ্ধ রাখা। আর এখানে রিবাত দ্বারা উদ্দেশ্য, নিজেকে নেক কাজে আবদ্ধ রাখা। (মেরকাত, আলোচ্য হাদীসের ব্যাখ্যায়)
এ থেকেই বোঝা যায়, এক নামাযের পর আরেক নামাযের ইনতিযারে মসজিদে অবস্থান আল্লাহর কাছে কত প্রিয় আমল।
আর এ আমলের কারণে ফিরিশতারাও মাগফিরাতের দুআ করতে থাকে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أَحَدُكُمْ مَا قَعَدَ يَنْتَظِرُ الصّلَاةَ، فِي صَلَاةٍ، مَا لَمْ يُحْدِثْ، تَدْعُو لَهُ الْمَلَائِكَةُ: اللهُمّ اغْفِرْ لَهُ، اللهُمّ ارْحَمْهُ.
কোনো ব্যক্তি এক নামাযের পর যতক্ষণ আরেক নামাযের ইনতিযারে (মসজিদে) থাকে সে নামাযে রয়েছে বলেই গণ্য হয়; যতক্ষণ সে পবিত্র অবস্থায় থাকে। আর ফিরিশতারা তার জন্য দুআ করতে থাকে; ফিরিশতারা বলে-
اللهُمّ اغْفِرْ لَهُ، اللهُمّ ارْحَمْهُ.
হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও, তার প্রতি দয়া কর। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৪৬২
Leave a Reply