শত মানুষের ঘাতক ও তার তাওবা.

শত মানুষের ঘাতক ও তার তাওবা.

হযরত ঈসা (আ)-এর উম্মতে ছিলো এক ভয়ঙ্কর খুনী। সে একে একে নিরানব্বই জন মানুষ খুন করেছিলো। তারপর হঠাৎ একদিন তার দিলে আল্লাহর ভয় পয়দা হলো।
সে পেরেশান হয়ে ভাবলো, হায়, আমার কী উপায় হবে! যেখানে একজন মানুষকে হত্যা করার অর্থ হলো গোটা মানবজাতিকে হত্য করা সেখানে আমি তো নিরানব্বই জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছি!

(মানুষ হত্যা করার যে সাজা কোরআনে কারীমে বয়ান করা হয়েছে অন্য কোন গোনাহ সম্পর্কে তা বয়ান করা হয়নি। ইরশাদ হয়েছে- ومـن يقتـل مؤمنـا متعمـدا فجـزاءه جهنم خـالـدا فيهاط وغضب اللـه عليـه ولعـنه واعـد لـه عذابا
عظيـما
যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করে তার সাজা হবে চিরস্থায়ী জাহান্নাম। তার উপর হবে আল্লাহর গযব এবং আল্লাহর লা‘নত। আর তার জন্য তিনি ভীষণ আযাব তৈয়ার করে রেখেছেন।)

যাই হোক, আল্লাহর ভয়ে ভীত ঐ ব্যক্তি ঈসাঈদের এক পাদ্রীর কাছে গিয়ে বললো, আমি তো নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করেছি। তো আমার তাওবার কি কোন উপায় আছে?
পাদ্রী বললো, তোর নাজাতের কোন রাস্তা নেই, তুই তো সোজা জাহান্নামী।

লোকটি তখন ক্রোধে আত্মহারা হয়ে বললো, বাঁচার উপায় নেই, তো তোমাকে বাঁচিয়ে রেখে লাভ কী, আসো তোমাকে দিয়ে একশ পুরা করি। এই বলে লোকটি ঐ পাদ্রীকে হত্যা করে ফেললো।
তারপর সে এক ঈসাঈ সাধুর কাছে গিয়ে বললো, আমি একশ মানুষের হত্যাকারী, আমার নাজাতের কি কোন উপায় আছে? তিনি বললেন, তুমি তাওবা করে আল্লাহর কাছে মাফ চাও, আর এককাজ করো। অমুক বস্তির লোকেরা নেককার, তুমি গিয়ে তাদের সঙ্গে বসবাস করো।

সাধুর উদ্দেশ্য ছিলো যে, তাদের ছোহবতে সেও নেককার হয়ে যাবে এবং যে গোনাহ করেছে তার ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করবে।

লোকটি নেককারদের বস্তির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো, কিন্তু পথেই তার মৃত্যু হলো।

তখন রহমতের ফিরেশতা এবং আযাবের ফিরেশতাদের মধ্যে বিরোধ হলো। আযাবের ফিরেশতা বললেন, এ তো শত লোকের ঘাতক, সুতরাং সে আমাদের ভাগে, আমরা তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবো।

আর রহমতের ফিরেশতা বললেন, সে তো তাওবা করে নেককার হওয়ার জন্য চলেছিলো। সুতরাং সে আমাদের, আমরা তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবো।

আল্লাহ তা‘আলা তখন ফায়ছালা করলেন যে, লোকটির মউতের স্থান থেকে উভয় দিকের দূরত্ব পরিমাপ করো, তারপর দেখো, মৃত্যুর সময় সে কোন স্থানের বেশী নিকটে ছিলো। পরিমাপ করে দেখা গেলো, সে নেককারদের বস্তির একগজ বেশী কাছে ছিলো।
তখন আল্লাহ তা‘আলা আদেশ করলেন, তাকে রহমতের ফিরেশতাদের হাওয়ালা করা হোক।

এই ঘটনার শিক্ষা হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী (রহ) হাদীছে বর্ণিত এই ঘটনা থেকে প্রমাণ আহরণ করে বলেন, লোকটির অপরাধ ছিলো হুকূকুল ইবাদের সাথে সম্পর্কিত।

কিন্তু সে যেহেতু হুকূকুল ইবাদ আদায় করার নিয়ত ও প্রতিজ্ঞা করে রওয়ানা হয়েছিলো সেহেতু তার তাওবা কবুল করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে মাফ করে দিয়েছেন।

আর যাদের সে হত্যা করেছিলো, যারা তার যুলুমের শিকার হয়েছিলো, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাদের দরজা বুলন্দ করে তাদেরকে খুশী করে দেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *