তাকওয়া ও খোদাভীতির ঘটনা-৪

তাকওয়া ও খোদাভীতির ঘটনা ৪

হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রাহ. লেখেছেন। তিন লেখেন- আমি সাহারানপুর যাচ্ছিলাম। থানাভবন স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠেছি। এক নতুন আগন্তুক মৌলভী সাহেব ট্রেন থেকে নামলেন। তিনি দিল্লী থেকে আমার সাথেই সাক্ষাতের জন্য এসেছেন। বিষয়টি জানার পর বললাম, ‘আমি তো এখন সফরে যাচ্ছি, আপনার ইচ্ছা হলে সাহারানপুর পর্যন্ত আমার সাথে যেতে পারেন। ট্রেনে কথা হবে। টিকেট নিয়ে নিন।’ কিন্তু সময় ছিল না। তিনি টিকেট নিতে পারলেন না। গার্ডকে বলে ট্রেনে উঠে পড়লেন। যখন ট্রেন নানূতা স্টেশনে পৌঁছল- এটা থানাভবনের পরের স্টেশন- আমি তাকে বললাম, এখন গার্ডের কাছে যান এবং তাকে টাকা দিয়ে রশীদ নিয়ে নিন। সামনের জন্যও টিকেট কেটে ফেলুন। গার্ড তাকে বলল, থানাভবন (থেকে নানূতা) পর্যন্তের ভাড়া মাফ করে দিচ্ছি, এরপর নানূতা থেকে সাহারানপুরের টিকেট দিয়ে দিল।

মৌলভী সাহেব আমার কাছে এসে ঘটনাটা জানালে আমি বললাম, এটা তো না-জায়েয হয়েছে। গার্ড তো গাড়ির মালিক নয়… সে রেলওয়ের একজন কর্মচারীমাত্র। তার তো মাফ করার অধিকার নেই। আপনার উপর এই ভাড়াটা ঋণ হয়ে থাকছে, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে অবশ্যই আদায় করতে হবে, কিন্তু এখন তো গার্ডের কাছ থেকে এর রশীদ নেয়ার সুযোগ নেই। কাজেই আপনি পরে এই পরিমাণ অর্থের টিকেট কিনে তা ছিঁড়ে ফেলবেন। এভাবে রেলওয়েতে আপনার ভাড়া পৌঁছে যাবে।’

ঐসময় এক ইংরেজি শিক্ষিত হিন্দু ভদ্রলোকও গাড়িতে ছিলেন। আগাগোড়া গোটা বিষয়টা লক্ষ্য করে তিনি বললেন, জনাব, আমি আমার একটি দুর্বলতা আপনাদের কাছে প্রকাশ করছি। যখন গার্ড তাকে বলল, নানূতা পর্যন্ত ভাড়া মাফ করে দিয়েছি, আমি মনে মনে খুব খুশি হয়েছিলাম যে, এক গরীব বেচারার কিছু উপকার হল। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, আমার খুশি হওয়াটা ঠিক ছিল না। আমি তো একটি অনৈতিক বিষয়ে খুশি হয়েছিলাম। ন্যায়ের কথা তো সেটাই, যা আপনি বলেছেন।

এই ঘটনা উল্লেখ করে হাকীমুল উম্মত বলেন-

میں کہتا ہوں کہ یہ تو ایک چھوٹی سی بات ہے، یہ تو اسلام کی ادنی جھلک ہے، اگر اہل انصاف ہمارے پاس چند روز رہیں تو ان کو اسلام کی بڑی بڑی خوبیاں معلوم ہونگی.

আমি বলি, এটা তো খুব সামান্য একটি ব্যাপার ছিল। এ তো ইসলামের খুব সামান্য একটি ঝলক মাত্র। ন্যায়নিষ্ঠ লোকেরা যদি আমাদের কাছে কিছুদিন থাকেন তাহলে তারা ইসলামের বড় বড় সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। -খুতুবাতে হাকীমুল উম্মত (মাহাসিনে ইসলাম), ৮/ ৫৪-৫৫

একটি বিষয় স্মরণ রাখা উচিত। ব্যক্তির হক যদি নষ্ট করা হয় তার কাছে ক্ষমা চাওয়া যায়, কিন্তু যদি সমষ্টিগত বা রাষ্ট্রীয় কোনো হক নষ্ট করা হয় তখন ক’জনের কাছে ক্ষমা চাওয়া যাবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *