তাকওয়া ও খোদাভীতির গল্প-০২

তাকওয়া ও খোদাভীতির গল্প

আল্লামা তাকী উসমানী দা. বা. বলেন- ‘আমার শ্রদ্ধেয় পিতা হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. একবার রেলগাড়ীতে সফর করার জন্য স্টেশনে যান। গিয়ে দেখেন, যে শ্রেণীর টিকেট কিনেছেন সেখানে তিল ধারণের ঠাঁই নেই।

ওদিকে গাড়ী ছেড়ে দেয়ার সময় হয়ে গিয়েছে; হাতে টিকেট পরিবর্তন করে নেওয়ার মত সময়ও নেই। বাধ্য হয়ে তিনি উপর শ্রেণীর বগিতে আরোহণ করেন। তিনি ভেবেছিলেন, টিকেট চেককারী এলে তার থেকে টিকেট পরিবর্তন করে নেবেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে সারা পথে কোনো চেকারও আসেনি। অবশেষে তিনি এ অবস্থাতেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছেন।

গাড়ী থেকে নেমে তিনি সোজা টিকেট কাউন্টারে চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে জেনে নেন, উভয় শ্রেণীর ভাড়ার মধ্যে ব্যবধান কতটুকু। তারপর ওই পরিমাণ মূল্যের একটা টিকেট কিনে সেখানেই ছিঁড়ে ফেলেন। এ দেখে রেলওয়ের যে হিন্দু অফিসারটি টিকেট দিয়েছিল, তার মনে বিস্ময় জাগল। হয়ত বা আমার পিতার মস্তিষ্কের সুস্থতার ব্যাপারেই তার সন্দেহ জেগেছে। সে বাইরে এসে আব্বাজানকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি টিকেট ছিঁড়ে ফেললেন কেন?

আব্বাজান তাকে পুরা ঘটনা শুনিয়ে বললেন, উপর শ্রেণীতে ভ্রমণ করার কারণে এই পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা আমার দায়িত্ব হয়ে যায়। তাই টিকেট ক্রয় করে রেলওয়ের দেনা পরিশোধ করলাম। আর টিকেটের যেহেতু এখন আর কোনো প্রয়োজন নেই তাই ছিঁড়ে ফেললাম।

তখন অফিসারটি বলল, আপনি তো স্টেশন থেকে বের হয়ে এসেছেন। এখন আপনার নিকট অতিরিক্ত ভাড়া কে চাইবে? তখন আব্বাজান উত্তর দিলেন, জী, হাঁ। কোনো মানুষ তো এখন আর আমার কাছে তা চাওয়ার নেই। কিন্তু যে হকদারের হক চাওয়ার কেউ থাকে না তা অবশ্যই আল্লাহ তাআলা চাইবেন। একদিন আমাকে তাঁর সামনে দাঁড়াতে হবে। তাই এটা করতে আমি বাধ্য ছিলাম।

(যিকর ও ফিকর, পৃ. ১০৯-১১০)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *