কেনো দান সাদাকাহ করবেন!

দান করলে ধনসম্পদ কমে, না বাড়ে- বিষয়টি যদি আমরা খোলা চোখে দেখি, তবে এ কথাই বলতে হয়- এতে ধন কমে যায়; নিজের মালিকানাধীন সম্পদের একাংশ চলে যায় আরেকজনের হাতে।
কিন্তু যদি আরেকটু গভীরভাবে আমরা লক্ষ করি, সমাজের দানশীলদের প্রতি তাকাই, তখন আমাদেরকে স্বীকার করতেই হবে- দান করে কেউ দরিদ্র হয় না। দান করলে ধন কমে না, বরং বাড়ে। বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিকতাবিরোধী। কিন্তু এ স্বাভাবিকতাবিরোধী বিষয়টিই বাস্তব। পবিত্র কুরআন এ বাস্তব, কিন্তু স্বাভাবিকতাবিরোধী বিষয়টির প্রতিই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এ বলে-
اَلشَّیْطٰنُ یَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَ یَاْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِ وَ اللهُ یَعِدُكُمْ مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَ فَضْلًا وَ اللهُ وَاسِعٌ عَلِیْمٌ.
শয়তান তোমাদেরকে দরিদ্রতার ভয় দেখায় ও কৃপণতার আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও দয়ার কথা দিচ্ছেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। -সূরা বাকারা (২) : ২৬৮
আয়াতের মর্মে কোনো অস্পষ্টতা নেই। মানুষ যখন দান করতে চায়, শয়তান তখন তাকে অভাবের ভয় দেখায়। নিজের ভবিষ্যৎ, সন্তানের ভবিষ্যৎ ইত্যাদি নানা বিষয় সামনে তুলে ধরে তাকে দান থেকে বিরত রাখতে চায়। দান করলে নিজের সম্পদ চলে যাবে অন্যের হাতে, এতে সম্পদ যাবে কমে- এসব তো স্বাভাবিক কথা-ই। স্বাভাবিকতার এ ফাঁদ পেতেই শয়তান মানুষকে দানের অবারিত সওয়াব থেকে বঞ্চিত রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু আল্লাহ দয়াময় আমাদেরকে শয়তানের এ ফাঁদের কথা জানিয়ে দিচ্ছেন, এর পাশাপাশি নিজে দয়া করার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন।
আল্লাহ যদি কাউকে দয়া করেন, তার আর ভয় কীসের! এ দয়ার প্রতি যার আস্থা অটুট, তার আবার কীসের দরিদ্রতা, কীসের অভাব! আল্লাহ তাআলা যে দানশীলদের দয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, বিষয়টি এখানেই শেষ নয়; তিনি এরপর ঘোষণা করছেন- আল্লাহ প্রাচুর্যময়। কোনো কিছুর অভাব তাঁর নেই। তিনি সর্বজ্ঞ। জগতের সবই তাঁর জানা।
কোনো কিছুই তাঁর অজানা নয়, তাঁর থেকে গোপন নয়। যাকে তিনি চান, তাকে তিনি দেবেন। তাঁর দেয়ার হাত সদা প্রসারিত। তাঁর দেয়া বড়ই অকৃপণ। তাঁর প্রাচুর্যেও কোথাও কোনো ঘাটতি নেই। তাঁর ইলম ও জ্ঞান, তাঁর কুদরত ও ক্ষমতা- সবই অসীম। ফুরিয়ে যাবার ভয় নেই কোনো কিছুতেই। এমন সর্বব্যাপী ক্ষমতার অধিকারী যিনি, তিনি কথা দিচ্ছেন- নিজের কষ্টার্জিত সম্পদ কেউ কাউকে দান করলে তাকে তিনি দুটি পুরস্কার দেবেন :
এক. পরকালে তাকে ক্ষমা করবেন।
দুই. দুনিয়াতে তার প্রতি দয়া করবেন। অর্থাৎ তার সম্পদ আরও বাড়িয়ে দেবেন।
কিয়ামতের ময়দানে যখন মানুষের আমলের হিসাব হবে, তখন কারও হাতেই কোনো টাকাপয়সা থাকবে না। দুনিয়ার আমলই তখন একমাত্র সম্বল। হিসাবনিকাশের পর ভালো আমল যার বেশি হবে, তার খুশির কোনো সীমা থাকবে না। সে অন্যদের ডেকে ডেকে নিজের আমলনামা দেখাবে, পড়তে দেবে। আর যার মন্দ আমলের পাল্লা ভারি হয়ে যাবে, তার অবস্থা হবে ঠিক বিপরীত। নিজের কৃতকর্মের জন্যে আফসোস করা ছাড়া তার আর কিছুই করার থাকবে না। দুনিয়াতে মানুষ যখন শাস্তির মুখে পড়ে, তখন টাকাপয়সা দিয়ে তা থেকে মুক্তির চেষ্টা চালায়। কিন্তু ঐ সময় তো আর টাকাপয়সা থাকবে না কারও। যদি থাকত, তবে গোনাহের অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্যে সবই সে তখন দান করে দিত।
আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।
Leave a Reply