দুআ কেন কবুল হয় না

দুআর ফলাফল চোখে দেখি বা না দেখি আমাদেরকে দুআ করে যেতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুআর ফলাফল একেবারেই কম দেখা যায়, বলতে গেলে দেখাই যায় না। এমন একটি ক্ষেত্র হল, যখন মুসলমান মযলুম হতে থাকে, তাদের উপর বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতন চলতে থাকে, তখন দুআ কান্নাকাটি করা হয়, চোখের পানি ফেলা হয়, কুনুতে নাযিলা পড়া হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত রক্ত ঝরতেই থাকে, আগুন জ্বলতেই থাকে। একসময় আগুন জ্বলা বন্ধ হয় কিন্তু মানুষ যেভাবে দুআ করেছিল, যেভাবে কান্নাকাটি করেছিল, সেভাবে কিছুই হয় না। তাৎক্ষণিকভাবেও হয় না, কাছাকাছি সময়েও হয় না।
তো যে সব ক্ষেত্রে ফলাফল চোখে দেখা যায় না সেসব ক্ষেত্রেও আমাদেরকে দুআ করে যেতে হবে। দুআ করে একথাও বলা যাবে না যে, আমি দুআ করেছি, দুআ কবুল হয় না। একথা বলা বেয়াদবী এবং দুআর মধ্যে বেবরকতির কারণ। বেবরকতির অর্থ হল, দুআ কবুল না হওয়া।
দুআ কবুল হওয়ার জন্যে আল্লাহ অনেক উপায় দান করেছেন। সময় দিয়েছেন। আমল দিয়েছেন। ব্যক্তি দিয়েছেন। অর্থাৎ নির্দিষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, অমুক সময় দুআ কবুল হয়। অমুক স্থানে দুআ কবুল হয়। অমুক ব্যক্তির দুআ কবুল হয়। অমুক অমুক আমলের পর দুআ কবুল হয়। রোযাদারের দুআ কবুল হয়। মুসাফিরের দুআ কবুল হয়। সমত্মানের জন্যে মা-বাবার দুআ কবুল হয়। দুআ কবুল হওয়ার কত ঘোষণা আল্লাহ কতভাবে দিয়েছেন।
দুআ কবুল হওয়ার যেমন অনেক উপায় রয়েছে তেমনি দুআ কবুল না হওয়ারও অনেক কারণ রয়েছে। সেগুলো থেকেও আমাদেরকে বাঁচতে হবে।
আরেকটা বিষয় হল, আমি যেভাবে চেয়েছি আমার দুআ জানা বা অজানা কোনো কারণে সেভাবে কবুল হয়নি, তখন আমাকে দুটি কথা মনে রাখতে হবে-
এক.
আমি দেখিনি তাই বলে একথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না যে, আমার দুআ কবুল হয়নি। দুআ কবুল হওয়ার অনেক পদ্ধতি আছে। কোন পদ্ধতিতে দুআ কবুল হয়েছে তা আমি জানি না। আল্লাহই ভাল জানেন।
দুই.
আমি দুআ কবুল হতে দেখিওনি, আবার আমার কিছু ত্রম্নটির কারণে দুআ কবুল হয়েছে বলেও মনে হয় না, তখনও আমার করণীয়, দুআ করা। একেতো আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না যে দুআ কবুল হয়নি। দ্বিতীয়ত যদি বাসত্মবিকই দুআ কবুল না হয়ে থাকে তাহলেও আমি দুআ বাদ দিতে পারি না।
কী কী কারণে দুআ কবুল হয় না
কী কী কারণে দুআ কবুল হয় না। কবুল না হওয়ার অর্থ একেবারে কবুল হবে না এটা নয়। কবুল না হওয়ার অর্থ হল, কবুল হওয়ার কোনো ওয়াদা নেই। নিশ্চয়তা নেই। নয়ত আল্লাহ তাআলার কুদরত আছে, আল্লাহ চাইলে যে কোনো সময় যে কারো দুআ কবুল করতে পারেন।
দুআ কবুল না হওয়ার প্রথম কারণ হল, হাদীস শরীফে এসেছে,
إن الله أمر المؤمنين ما أمر المرسلين… يا أيها الذِيْنَ آمَنُوْا كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ و اعْمَلُوْا صَالِحًا …
আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে সে জিনিসের আদেশ করেছেন যে জিনিসের আদেশ তিনি নবীদেরকে করেছেন। তা হল, হালাল খাও এবং সৎকাজ কর। রাসূলদেরকেও আল্লাহ সম্বোধন করে বলেছেন, তোমরা হালাল রিযিক গ্রহণ কর এবং আল্লাহর ইবাদত কর।
ثم ذكر الرجل أشعث أغبريطيل السفريمد يديه يقول: يا رب يا رب! وملبسه حرام و مشربه حرام و مأكله حرام !
আল্লাহর এক বান্দা লম্বা সফরে বের হয়েছে। এত দীর্ঘ সফর যে, মাথার চুল এলোমেলো হয়ে গেছে এবং কাপড়চোপড় ময়লা হয়ে গেছে। সফরে তো এমনি দুআ কবুল হওয়ার কথা। তার উপর তার এই করুণ হালতে তো আরো বেশী করে কবুল হওয়ার কথা। তো সে এক বিপদে পড়ে দুহাত আসমানের দিকে প্রসারিত করে এভাবে আল্লাহকে ডাকছে, হে আল্লাহ! হে আল্লাহ! সে এভাবে দুআ করেই যাচ্ছে। অথচ লোকটার অবস্থা হল, তার খাবার হারাম। যা পান করে তা হারাম। আবার যা পরিধান করে তাও হারাম। সুতরাং এর দুআ কবুল হবে কীভাবে? তো গেযা হালাল না হওয়া দুআ কবুল না হওয়ার একটি কারণ। আবার কোনো গোনাহের বিষয় আল্লাহর কাছে চাওয়া, যেমন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা, এটি এমনিতেও নাজায়েয আবার দুআ কবুল না হওয়ার একটি কারণ।
দুআ কবুল না হওয়ার আরেকটা কারণ হল, ব্যাপকভাবে যখন সমাজে নাহী আনিল মুনকার বন্ধ হয়ে যাবে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যখন একেবারেই ছেড়ে দেয়া হবে, ফাহেশা এবং অশস্নীলতা যখন মহামারির রূপ ধারণ করবে তখনও দুআ কবুল হবে না। এ সকল বিষয়ে কুরআন মাজীদে সতর্ক করা হয়েছে।
وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْكُمْ خَاصَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
(তরজমা) তোমরা ঐ বিপর্যয়কে ভয় কর, যা বিশেষভাবে তোমাদের মধ্যে যারা যুলুম করে কেবল তাদেরকেই আক্রান্ত করে না। -সূরা আনফাল ৮ : ২৫
অনেক গোনাহ আছে এমন, এর উপর শাসিত্ম যখন আসে তখন শুধুই গোনাহগারদের উপর আসে না, ব্যাপকভাবে সকলের উপর আসে। আর এ সকল ফাহেশা ও অশস্নীলতা যখন ব্যাপক আকার ধারণ করে, যখন নাহী আনিল মুনকার বন্ধ হয়ে যায়, কোনো কওম কোনো জাতি কোনো দেশ বা সমাজে যদি অশস্নীলতা, মিথ্যাচার, দুর্নীতি, পাপাচার, অন্যায়, অত্যাচার ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষভাবে সমাজের সেই শ্রেণীর মাঝে যে শ্রেণীর মাধ্যমে এ মন্দ কর্ম দূর হওয়ার কথা, তখন এর শাসিত্ম হয় অত্যন্ত ভয়াবহ। এখন উম্মত আছে এই হালতে। আমরা নাফরমানী করতে করতে আল্লাহকে এত নারায করেছি যে, যেদিক থেকে আমাদের সংশোধনী আসবে সেদিকটিই খারাপ হয়ে আছে।
-আল্লামা আব্দুল মালিক দা.বা.
Leave a Reply