পরীক্ষায় নকল করে পাস করে কিংবা জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরি নিলে বেতন হালাল হবে কি?

পরীক্ষায় নকল করা কিংবা জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরি নেওয়া মিথ্যা, খেয়ানত, বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা এবং যোগ্য ব্যক্তিদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার মতো গুনাহ রয়েছে, তাই পরীক্ষায় নকল করা শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে জায়েয নয়। যারা এসব কর্মে লিপ্ত হয় তাদের জন্য তাওবা, ইস্তিগফার করা আবশ্যক।
পরীক্ষায় নকল করা মারাত্মক গুনাহের কাজ৷ এটি ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার শামিল৷ হাদীসে এসেছে-
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ:« مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا السِّلاَحَ فَلَيْسَ مِنَّا،وَمَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا». (صحيح مسلم:حدیث رقم:294)
আবূ হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিতঃ : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয় আর যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দিবে সেও আমাদের দলভুক্ত নয়।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৯৪)
حديث ابن مسعودٍ عنِ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم : ”مَنْ غَشَّنا فليس منَّا ، والمكرُ والخِداعُ في النار“. وقد ذكرنا فيما تقدَّم حديث أبي بكر الصدِّيق المرفوع : ”ملعونٌ من ضارَّ مسلماً أو مكرَ به “.خرَّجه الترمذيُّ. (جامع العلوم والحكم :35/ 9)
ইবনে মাসউদের রা. হাদীসটি যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন: “যে ব্যক্তি আমাদেরকে ধোঁকা দেয়, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, এবং ষড়যন্ত্রকারী ও প্রতারক জাহান্নামে যাবে।” এবং আবু বকর সিদ্দিক রা. থেকে বর্ণিত “অভিশপ্ত সে যে কোনো মুসলমানের ক্ষতি করে বা তার সাথে ষড়যন্ত্র করে।” তিরমিযী বর্ণনা করেছেন। (জামিউল উলুম ওয়াল হিকামি : ৯/৩৫)
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যদি কোনো ব্যক্তি চাকরি পাওয়ার জন্য পরীক্ষা দেয়, কিন্তু পরীক্ষায় সে কিছু জালিয়াতি করে, যেমন প্রশ্ন ফাসঁ বা নকল করে, তাহলে সেই চাকরির বেতন কি হালাল হবে ?
প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থায় কোনো ব্যক্তি যদি প্রতারণার মাধ্যমে চাকরি পেয়ে যায় তাহলে সে গুনাহগার হবে, ফলে তার জন্য আন্তরিকভাবে তাওবা করা আবশ্যক হবে। তবে উক্ত ব্যক্তি যদি সেই চাকরির জন্য যোগ্য হন এবং তিনি তার দায়িত্ব পুরাপুরি পালন করতে পারেন তাহলে সেই অবস্থায় বেতন গ্রহণ করা হালাল হবে।
কারণ বেতন বা মজুরি কর্মের বিনিময়ে হচ্ছে।
আর যদি চাকরি না পাওয়া যায়, তবে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা এবং দ্বীনদারির সাথে অর্পিত দায়িত্ব আদায় করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রতারণা করে চাকরি পাওয়া জায়েয হবে না।
দ্বিতীয় আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে , পরীক্ষায় নকল করে প্রাপ্ত সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে চাকরির বেতনের বিধান কি?
উত্তর: পরীক্ষায় নকল করা কিংবা জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরি নেওয়া খেয়ানত, বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা এবং গুনাহের কাজ। যারা এসব কর্মে লিপ্ত হয় তাদের জন্য অতিসত্বর তাওবা, ইস্তিগফার করা আবশ্যক।
তবে নকল করে প্রাপ্ত ডিগ্রির ভিত্তিতে চাকরি করে যে বেতন গ্রহণ করা হয় তা হালাল না হারাম হবে, সে বিষয়ে মুলনীতি হচ্ছে যে, যদি সেই ব্যক্তি তার সেই চাকরি ব্যাপারে যোগ্যতা রাখে এবং তিনি তার সব দায়িত্ব পুরাপুরি পালন করতে পারেন তাহলে সেই অবস্থায় বেতন গ্রহণ করা হালাল হবে।
কেননা বেতন হালাল হওয়ার সম্পর্ক হলো দায়-দায়িত্ব সঠিকভাবে আদায় করার সাথে।
আর যদি এমন হয় যে সেই ব্যক্তি উক্ত দায়িত্ব ও চাকরির যোগ্য না হয় অথবা চাকরির যোগ্য কিন্তু সঠিকভাবে দ্বীনদারির সাথে কাজ করে না, তাহলে তার বেতন গ্রহণ করা হালাল হবে না।(অর্থাৎ যে পরিমাণ খিয়ানত হবে সে পরিমাণ বেতন হালাল হবে না।
তথ্য সুত্র- জামিয়া ইসলামিয়া বিন্নুরি টাউন,করাচী
ওয়েবসাইট ফাতাওয়া নম্বর ১৪৪০১০২০০৩১৯,
দারুল ইফতা, জামিয়াতুর রশিদ,করাচী, ফাতাওয়া নং
৫৭/৬১১৫৯,
Leave a Reply